ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

এক যুগেও শেষ হয়নি বিচার

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এক যুগেও শেষ হয়নি বিচার

ঢাকা: ২২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেও এক যুগে শেষ হয়নি ইতিহাসের নৃশংসতম গ্রেনেড হামলার বিচার। এ মামলার আসামি ৫২ জন ও চার্জশিটভূক্ত সাক্ষী ৪৯১ জন।

সাক্ষ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা।

এর আগে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় ৬৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছিল। ওই মামলার আসামি ছিলেন ৮৫০ জন আর চার্জশিটভূক্ত সাক্ষী ছিলেন ১ হাজার ৩৪৫ জন। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর ৯ মাস পর ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ও দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করতে নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। গত এক যুগে চার সরকারের সময় পাঁচটি আদালত ঘুরেছে মামলাটি। একাধিক বিচারক বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পরও ৫ বছর গত হয়েছে। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।

বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে দুই কার্যদিবসে মামলার বিচার কাজ চলছে। সোমবার (২২ আগস্ট) ও মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। ২২৪তম সাক্ষী হিসাবে মামলার অন্যতম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মো. ফজলুল কবীরের জেরা চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মামলা প্রমাণের জন্য কতোজনের সাক্ষ্যের প্রয়োজন হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন, তার বেশি একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে না।  

সাহারা খাতুন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপনসহ মামলার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে গত এক বছরে।

সৈয়দ রেজাউর রহমানের সহকারী আইনজীবী আকরাম হোসেন শ্যামল জানান, মামলাটি দুই দফা তদন্তে সময় লেগেছে ৬ বছর। তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে ছয়বার। আসামিপক্ষ হাইকোর্টে যাওয়ায় ২৯২ কার্যদিবস বা প্রায় দু’বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। প্রায় ৮ মাস শুনানির পর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিচারের জন্য ৩ বছরের কিছু বেশি সময় পেয়েছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ মামলাটিকে উল্টো পথে পরিচালনা করা হয়েছে। তদন্তের নামে আলামত ধ্বংস ও অনেক আলামত ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়েছে। জজ মিয়া নাটক সৃষ্টি করে মূল আসামিদের আড়ালের চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও মামলাটিতে যেভাবে সাক্ষ্য আসছে তাতে সকল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ ‍জুন  নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে প্রথম চার্জশিট দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিনিয়র সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট ফজলুল কবির।

চার্জশিট দাখিলের পর মামলাটির বিচার শুরু হয় ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত মাত্র ৭ মাস ১২ দিনে ট্রাইব্যুনাল ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

কিন্তু ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস, এর মদদদাতা, সরবরাহকারী ও পরিকল্পনাকারীর নাম উল্লেখ না থাকায় এ আবেদন জানানো হয়।

এবার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।   ১৩ আগস্ট থেকে তিনি মামলাটির অধিকতর তদন্ত শুরু করেন। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের মধ্য দিয়ে মামলাটির পুনর্তদন্ত শুরু শেষ। দুই দফায় তদন্তে সময় লাগে ৬ বছর।

সম্পূরক চার্জশিটে আসামি করা হয় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক মন্ত্রী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরও ৩০ জনকে।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ফের বিচার শুরু হয়।

মামলার ৫২ আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে আছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২৫ জন আসামি কারাগারে আটক আছেন।   যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাবেক মন্ত্রী জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নির্মমভাবে নিহত হন। সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শত শত নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী আদালতে মামলাটির বিচার চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এমআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।