ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রিভিউ শুনানি

ফের পেছানোর আবেদন মীর কাসেমের আইনজীবীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
ফের পেছানোর আবেদন মীর কাসেমের আইনজীবীর

ঢাকা: ফাঁসির রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বুধবারের (২৪ আগস্ট) কার্যতালিকায় এসেছে। তবে শুনানি পেছাতে ফের তিন সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানিয়েছেন মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

এর আগে গত ২৫ জুলাই সময়ের আবেদন জানিয়ে একমাস পিছিয়ে নিয়েছিলেন খন্দকার মাহবুব। সেবারের মতো এবারও শুনানির প্রস্তুতি নিতে পারেননি বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আপিল বিভাগের ১ নম্বর কোর্টের বুধবারের কার্যতালিকায় মামলাটি ৫ নম্বরে আছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে এ কার্যতালিকা প্রকাশিত হয়।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে নেতৃত্ব দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মীর কাসেম আলীর পক্ষে থাকবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

সময়ের আবেদনে খন্দকার মাহবুব দাবি করেছেন, মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম এ মামলার দেখাশোনা করেন। তাকে সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে কাছ থেকে মীর আহমেদ বিন কাসেমের কাছে থাকা মামলার কাগজপত্র ও শুনানির প্রস্তুতি নিতে পারেননি তিনি। এ কারণে শুনানি তিন সপ্তাহ পেছানো প্রয়োজন।  

আগের দফায় (২৫ জুলাই) বর্তমান পরিস্থিতিতে শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেননি উল্লেখ করে শুনানি পেছাতে দুই মাসের সময়ের আবেদন জানিয়েছিলেন এই আইনজীবী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলীর।

গত ০৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। পাঁচ বিচারপতির রায়ে স্বাক্ষরের পর তা প্রকাশিত হয় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে।

রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরদিন ০৭ জুন সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।

এরপর গত ১৯ জুন ৬৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। এতে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাস ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আরজি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় এই শীর্ষনেতা।

রিভিউ আবেদনে সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে মোট ১৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।

এরপর চেম্বার বিচারপতির আদালতে দ্রুত রিভিউ নিষ্পত্তির আরজি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২১ জুন শুনানির দিন ২৫ জুলাই ধার্য করেছিলেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত। গত ২৫ জুলাই আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি একমাস পিছিয়ে ২৪ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ আদালত।

এ রিভিউ আবেদন খারিজ হলে সরকারের সিদ্ধান্তে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শুরু হবে দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। অবশ্য শেষ আইনি সুযোগ হিসেবে মীর কাসেম আলী তার অপরাধ স্বীকার করে ও ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন। সেটি না করা হলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না।

আপিল মামলার রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

১১ নম্বর ছাড়াও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার দায়েও কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত মোট ১০টি অভিযোগের মধ্যে আরও ৬টি অভিযোগে মীর কাসেমের সাজা বহাল এবং আরও ২টি থেকে অব্যাহতি ও খালাস দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির পাশাপাশি ৫৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন তিনি।
   
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা ছিলেন জামায়াতের বর্তমান কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী। সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) ও জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ (যৌথ দায়বদ্ধতা) হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও তাই বর্তেছে তার ওপরে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
ইএস/এএসআর
**
মীর কাসেমের রিভিউ শুনানি কার্যতালিকায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।