ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

আইন ও আদালত

বিচারক নিয়োগের নীতিমালা নিয়ে রুলের রায় যেকোনো দিন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪৬, আগস্ট ২৮, ২০১৬
বিচারক নিয়োগের নীতিমালা নিয়ে রুলের রায় যেকোনো দিন

ঢাকা: বিচারক নিয়োগের নীতিমালা নিয়ে রিট মামলায় জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়েছে। রায় যেকোনো দিন দেবেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চে রোববার (২৮ আগস্ট) মামলাটির শুনানি শেষ হয়। এরপর রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আদালত।    

আদালতে এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দিয়েছেন সাতজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তারা হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও এ এফ হাসান আরিফ। রিট আবেদনকারী রাগিব রউফ চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন হাসান এম এস আজিম ও মির্জা আল মাহমুদ।

বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা আনতে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালের ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগিব রউফ চৌধুরী এ রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ০৬ জুন বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে বাছাই প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা’ আনতে কেন সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা তৈরি করা হবে না, তা জানাতে রুল জারি করেন ।

পরে রিট মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ছিলো। ওই বেঞ্চ সাতজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন।

এদিকে ২০১২ সালের ৫ আগস্ট আইন কমিশন বিচারক নিয়োগে সুপারিশ পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়ে। সুপারিশের ভূমিকায় বলা হয়, ‘সংবিধানে বিচারক নিয়োগে কিছু সুনির্দিষ্ট শর্তাবলির উল্লেখ ছাড়াও আইনের দ্বারা শর্তাবলী নির্ধারণের (৯৫/২/গ) ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিগত ৪০ বছরে এই উপ-অনুচ্ছেদের অধীনে কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি’।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ (২) (খ)-এর অধীনে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভের জন্য অধঃস্তন আদালতে চাকরির অভিজ্ঞতা ১০ বছর বিশেষভাবে বুঝতে ও গণনা করতে হবে। এই ১০ বছর পুরোটাই বিচারকাজে নিয়োজিত অবস্থায় থাকতে হবে। কোনো বিচার বিভাগীয় প্রশাসন যেমন, আইন মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থায় কর্মের সময় গণনায় আনা যাবে না। ১০ বছরের মধ্যে অবশ্যই ন্যূনতম তিন বছর জেলা জজ বা সমপর্যায়ের বিচারক হিসেবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে’।

সংবিধানের ৯৫ (২) (ক) উল্লেখ করে দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মকালের ১০ বছরও বিশেষভাবে বুঝতে ও পড়তে হবে। আদালতে ১০ বছরের জন্য নিছক অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) যথেষ্ট বিবেচিত হবে না। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা সফলভাবে পরিচালনাসহ তাকে নিয়মিত সক্রিয়ভাবে আইন পেশা (প্র্যাকটিস) করতে হবে, যা প্রধান বিচারপতি ও তার সহবিচারপতিরা নির্ধারণ করবেন। এ ছাড়া অন্তত দুই বছর আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে’।

তৃতীয় সুপারিশে সংবিধানের ৯৫ (২) (ক) ও ৯৫ (২) (খ) উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এর অধীন আইনজীবী ও বিচারক ছাড়াও ৯৫ (২) (গ) এর অধীন কোনো আইনজ্ঞ (যেমন আইনের অধ্যাপক বা আইনের গবেষক), যার প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় রয়েছে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচিত হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তার বয়সের নিম্ন সীমা হবে ৪৫ বছর’।

চতুর্থ সুপারিশে কমিশন বলেছে, ‘সুপ্রিম কোর্টে অধঃস্তন আদালত থেকে বিচারক নিয়োগের আনুপাতিক সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন’।

সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে পঞ্চম সুপারিশে বলা হয়, ‘এর অধীন হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী মেয়াদে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ থেকে অস্থায়ী মেয়াদে কোনো বিচারকের আপিল বিভাগে আসন গ্রহণের বিধান বোধগম্য কারণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বিধায় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন’।

ষষ্ঠ সুপারিশে বলা হয়, ‘বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ‘পরামর্শ’ নিছক আভিধানিক অর্থে নয়, বরং তা সাংবিধানিক ও বিচার বিভাগীয় ধ্যান-ধারণায় বিশেষ অর্থে পড়তে ও বুঝতে হবে। যার ফলে ‘পরামর্শ’ হয়ে উঠতে পারে অর্থবহ ও কার্যকর। এ জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান বিচারপতির পরামর্শ চাওয়া এবং প্রধান বিচারপতির পরামর্শ প্রদান প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও লিখিতভাবে’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আইন ও আদালত এর সর্বশেষ