ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন দুই মন্ত্রী'

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬
‘সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন দুই মন্ত্রী'

ঢাকা: খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবিধান রক্ষায় তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এবং বিচারাধীন বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননার দায়ে দুই মন্ত্রীকে করা জরিমানার পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এ কথা বলেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত ২৭ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে সাতদিনের কারাদণ্ড দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। তাদেরকে সাতদিনের মধ্যে জরিমানার টাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও কিডনি ফাউন্ডেশনকে দিতে বলা হয়। পরে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন তারা।

বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) ৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত অবমাননা করেছেন দুই মন্ত্রী। আর পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারপতি বলেন, ‌সংবিধানের আলোকে আইনের শাসন রক্ষার ক্ষেত্রে বিবাদীরা তাদের শপথের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

এ মতামতের পক্ষে অন্য চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এ অংশের রায় লেখেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।  

অন্য তিন বিচারপতি জরিমানার শাস্তির বিষয়ে একমত হলেও দুই মন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করেননি বলে রায়ে উল্লেখ করেন। তারা হচ্ছেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি নিজামুল হক। এ অংশের রায় লেখেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

গত ৫ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার আপিল শুনানি পুনরায় করার দাবি জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
এ বক্তব্য মিডিয়ায় প্রকাশের পর গত ৮ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তলব করেন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিশ জারি করেন। সরকারের এ দুই মন্ত্রীকে ১৫ মার্চ সকাল ৯টায় সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে তাদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। অন্যদিকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয় ১৪ মার্চের মধ্যে। নোটিশে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- তা দুই মন্ত্রীর কাছে জানতে চান আপিল বিভাগ।

দুই মন্ত্রীর পক্ষে গত ১৪ মার্চ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশের জবাব দাখিল করা হয়। আদালতের তলবে ১৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক হাজিরা দেন। তবে, বিদেশে থাকায় সেদিন হাজিরা দিতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ২০ মার্চ ফের দুই মন্ত্রীকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

পরে ২০ মার্চ সকালে হাজির হন দুই মন্ত্রী। ওইদিন আপিল বিভাগ খাদ্যমন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন এবং ২৭ মার্চ দুই মন্ত্রীকে ফের হাজিরের নির্দেশ দেন। এ কারণে গত ২৪ মার্চ নতুন করে আবারো নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন জানান খাদ্যমন্ত্রী।

২৭ মার্চ সকাল পৌনে ৯টার দিকে তাদের মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা ও শো’কজ নোটিশের জবাব দিতে সুপ্রিম কোর্টে ফের হাজির হন দুই মন্ত্রী। তারা দু’জনই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান।

কামরুল ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল বাসেত মজুমদার। মোজাম্মেল হকের ক্ষমা চেয়ে করা আবেদনটি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।
 
আদালতের নির্দেশে দুই মন্ত্রীর করা মন্তব্য পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানি শেষে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে করা দুই মন্ত্রীর আবেদন নামঞ্জুর করে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৬
ইএস/এএসআর

** দুই মন্ত্রীকে জরিমানার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।