রোববার (২১ মে) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরুর আগে এ মন্তব্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
যুক্তিতর্ক শুরুর আগে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘কোর্টকে অ্যাড্রেস করে বক্তব্য দেবেন। সাইড টক করবেন না। কোর্টের ডেকোরাম মেইন্টেন করতে হবে। ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে হবে’।
‘আমরা আলাপ-আলোচনা করে লিভ টু আপিল গ্রহণের দিন অ্যামিকাস কিউরি ঠিক করেছি। যদি আপনি সাজেশন্স দিতে চান, আরও কাউকে যোগ করতে চান, সেটা বিবেচনা করবো। এ কোর্টে ওপেন মাইন্ড নিয়ে শুনানি হবে’।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সাজেশন্স দেবো না’।
তখন আদালত বলেন, ‘এখানে পলিটিক্যাল সাবমিশন শুনবো না। সাংবিধানিক বিষয়ে শুনানি করতে হবে’।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে যদি বঙ্গবন্ধুর কথা চলে আসে, তখন কী হবে? এছাড়া সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলো পলিটিক্যাল বিষয়গুলো চলে আসবেই’।
পরে শুনানির তৃতীয় কার্যদিবসে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। প্রথমদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সোমবার (২২ মে) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আপিল বিভাগ।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুরাদ রেজা বলেন, ‘আজকে আদালতে আমার মূল বক্তব্য ছিল এ রিট পিটিশনটাই মেইনটেনেবল (গ্রহণযোগ্য) না। এটি কোনো অবস্থায়ই পাবলিক ইন্টারেস্টের (জনস্বার্থের) আওতায় পড়ে না’।
তিনি বলেন, ‘এ কেসেও যদি কেউ এগ্রিবড (সংক্ষুব্ধ) মনে করেন, তাদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জাজরাও মনে করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান মামলাটি কোনোভাবেই পাবলিক ইন্টারেস্ট হতে পারে না- এটা ছিল আমার বক্তব্য’।
মুরাদ রেজা বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের রায় খণ্ডন করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগ আপিল বিভাগের সমস্ত রায় মানতে বাধ্য। হাইকোর্ট বিভাগ এটি খর্ব করেছেন। এছাড়াও বলেছি, এ মামলাটি প্রিম্যাচিউর। এখানে একটি আইন পাস করার কথা ছিল, সেটিও করা হয়নি। উদাহরণ দিয়ে আমি বলেছি, যে শিশুটির জন্মই হয়নি, সেটিকে গলাটিপে মেরে ফেলার প্রয়াস চালানো হয়েছে এ মামলা করে’।
মুরাদ রেজার মতে, ‘সংবিধানের ৯৬ ধারা সংবিধান প্রণেতারা প্রথম থেকেই রেখেছেন। মাঝখানে মার্শাল ল’ অথরিটি বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। তারাই এ সংবিধানকে বিকৃত করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল প্রভিশন ঢুকিয়েছেন। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বরং আমরা সংবিধানের মূল জায়গায় ফিরে গিয়েছি’।
‘এটি মূল সংবিধানের অংশই ছিল। এতে সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচারের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মূল ধারায় ফিরে যাওয়া কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক হতে পারে না। হাইকোর্ট ডিভিশন একটি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে রায় দিয়েছেন’।
‘এতোটুকু পর্যন্ত আমি আজ বক্তব্য দিয়েছি’- বলেন তিনি।
গত ০৮ ও ০৯ মে শুনানির প্রথম দু’দিনে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়ে শোনান মুরাদ রেজা। এছাড়া অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু বা আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে লিখিত মতামত জমা দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও এম আই ফারুকী।
গত ০৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির অন্য ৮ জন হলেন- এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, রফিক-উল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, টিএইচ খান, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
ইএস/এএসআর
** ষোড়শ সংশোধনীর আপিলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ফের সোমবার
** ষোড়শ সংশোধনীর আপিলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে