মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিচারপতি জুবায়ের রহমান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয়েছে।
গাজীপুরের কাশিমপুরে মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেডে বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহতের ঘটনায় মালিকের বিরুদ্ধে নতুন করে এফআইর করা, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ব্যয় দেওয়া এবং বয়লার আইনের বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারিসহ এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
বয়লার বিস্ফোরণের কারণে হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, যারা মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা ত্রুটিপূর্ণ বয়লার ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, বয়লার বিস্ফোরণে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঠেকাতে ও কর্মস্থল নিরাপদ রাখতে সংশ্লিষ্টদের নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং বয়লার আইন ১৯২৩ এর ২৮ ও ২৯ ধারা অনুসারে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিধিমালা প্রণয়নে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
তিন সপ্তাহের মধ্যে শিল্পসচিব, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, আইনসচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, প্রধান বয়লার পরিদর্শক ও প্রধান কারখানা পরিদর্শককে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ০৯ জুলাই রিট আবেদনটি করেন জাস্টিস্ ওয়াচ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান মিলন।
মিলন জানান, বয়লার নিয়ে ১৯২৩ সালের একটি আইন ছিলো। এ আইনে বয়লারের ব্যবহার নিয়ে বিধিমালা প্রণয়নের কথা রয়েছে। কিন্তু সেটি এখনো করা হয়নি। তাই এটি প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া বয়লার নিয়ে আইনের বিধান অনুসরণে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, শ্রমসচিব, শিল্পসচিব, বিজিএমইএ’র সভাপতি, প্রধান বয়লার পরিদর্শকসহ ১৭ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ০৫ জুলাই ওই কারখানার মালিক, মহাব্যবস্থাপক বা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা করে গ্রেফতার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
ওই নোটিশে বলা হয়, ‘গত ০৩ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের কারখানায় ডাইং সেকশনে বয়লার বিস্ফোরণে অপারেটর সালাম, এরশাদ ও মনসুর হকসহ ১৩ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। কারখানার মালিক অপরাধ ঢাকা দিতে সালাম, এরশাদ এবং মনসুর হকসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে চক্রবর্তী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আব্দুর রশিদকে বাদী করে পরদিন মামলা দায়ের করেন’।
‘নিহত সালামের ছেলে জানিয়েছেন, তার বাবা ওই ফ্যাক্টরিতে দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কাজ করছেন। কারখানার বয়লার ছিলো পুরনো ও ফিটনেসবিহীন। মালিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। ঘটনার দিন তার বাবার ডিউটি না থাকলেও ম্যানেজার টেলিফোনে ডেকে নিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন’।
‘কারখানার মালিক ও কর্মকর্তারা ওই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না’।
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার আগেই মামলা করার অর্থ হলো, অপরাধ ধামাচাপা দেওয়া। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করা’।
‘ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কারাখানার মালিক/জিএম/ম্যানেজারকে আসামি করে এই নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের ব্যবস্থা এবং নিহতদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জয়দেবপুর থানার মামলার কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করতে বাধ্য হবো’ বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
ইএস/এএসআর