এমন তথ্য জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার (জেলা জজ) মো. সেলিম মিয়া। এ ৩৩টি মামলার জন্য একটি ট্রাইব্যুনালই যথেষ্ট বলেও মনে করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান এবং বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুই বছর পর ২০১২ সালের ২৩ মার্চ বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হয়।
২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই নম্বর ট্রাইব্যুনালকে নিষ্ক্রিয় করে একটি করা হয়। সদ্য প্রয়াত বিচারপতি আনোয়ারুল হককে চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠিত হয় ট্রাইব্যুনাল। গত ১৪ জুলাই তিনি ইন্তেকাল করায় কয়েক মাস ট্রাইব্যুনাল অগঠিত ও বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। গত ১১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পর ফের পুরোদমে চলছে বিচারিক কার্যক্রম।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে মো. সেলিম মিয়া বলেন, কিছু সময় কার্যক্রম চলেনি। পুনর্গঠিত হওয়ার পর ফের চলছে। এখন পর্যন্ত জেলা-উপজেলা পর্যায়ের যে ৩৩টি মামলা আছে, একটি ট্রাইব্যুনালের জন্য যথেষ্ট। মামলা যদি বেশি আসে, তখন ট্রাইব্যুনাল বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় আসতে পারে।
গঠনের পর গত সাত বছর ৮ মাসে দুই ট্রাইব্যুনাল মিলে ২৮টি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এর ৭টি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত ও রিভিউয়ের রায়ের পর ৬টিতে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ৬ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর।
পর্যায়ক্রমে ফাঁসি কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধীরা হচ্ছেন- জামায়াতের সে সময়কার দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলী।
অন্য চূড়ান্ত রিভিউয়ের রায়ে জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
শুনানি চলাকালে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের স্বাভাবিক নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এ পর্যন্ত জামায়াতসহ ৫৩টি মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, আরও ২৬টি মামলার তদন্ত করছেন। ২১০ জনের বিরুদ্ধে আরও ৭৬টি মামলা ছাড়াও তদন্ত সংস্থায় রয়েছে আরও ৩ হাজার ৫০২ জনের বিরুদ্ধে ৬৪৩টি অভিযোগ।
মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছাড়াও তদন্তাধীন মামলার ৭৫ জনের মতো আসামি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
পলাতক আসামিদের বিষয়ে মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলো আমাদেরকে নিয়মিত প্রতিবেদন দিচ্ছে। তারা গ্রেফতার করতে পারছেন না বা গ্রেফতারের চেষ্টায় আছেন- এ ধরনের তথ্য পাঠানো হয়’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রথম রায় আসে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ফরিদপুরের পলাতক রাজাকার আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ রায় হয় গত ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হুসাইন ও মোহাম্মদ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে।
ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষিত ২৮ মামলার মধ্যে ছয়টির পলাতক আসামিরা আপিল করেননি। সেগুলো হলো- আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দীন-আশরাফুজ্জামান খান, বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার, ইদ্রিস আলী সরদার, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ও হাছান আলীর মামলা।
তবে দণ্ড বাড়াতে পলাতক জব্বারের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
আপিলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাকি মামলাগুলো। এর মধ্যে জামায়াতের সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২১ নভেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
ইএস/এএসআর