ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নিরাপত্তার জন্যই খালেদাকে বাইরের হাসপাতালে ‘না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৮
নিরাপত্তার জন্যই খালেদাকে বাইরের হাসপাতালে ‘না’

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যদি এমআরআই দরকার হয় বা সিটি স্ক্যান দরকার হয় তবে তিনি যে হাসপাতাল পছন্দ করবেন সেই হাসপাতালে রাষ্ট্রপক্ষ সেগুলো করে দেবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তবে খালেদা জিয়ার নিজের নিরাপত্তার জন্যিই তাকে বাইরের কোনো হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো যাবে না বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৮ মে) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

অপরদিকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটা এই পর্যায়ে কেন এসেছে? কেন এই শুনানি হচ্ছে? এর একমাত্র কারণ হলো, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় সরকার ভীত।

তিনি বলেন, নানারকম কলাকৌশল করে আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সরকার এসব করছে। আজকের এই শুনানির লক্ষ্যও সেটাই। আগামী নির্বাচনে নিজেদের পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে কিভাবে কারাগারে রাখা যায় সে চেষ্টাই তারা করছে।

এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার মামলায় পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী তাদের বক্তব্য রেখেছেন। আদালত তাদের বক্তব্য অনুধাবন করেছেন। সেই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে তার বক্তব্য দিয়েছেন। একজন আসামির পক্ষে সচরাচর একজন আইনজীবীই বক্তব্য রাখেন। এখানে পাঁচজন আইনজীবীকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি আরো একটি বিষয় আদালতের সামনে তুলে ধরেছি, মামলাতে তিনি কিভাবে সময়ক্ষেপণ করেছেন। নয় বছর লেগেছে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে নিম্ন আদালতে। ২৬ বার এসেছেন হাইকোর্টে, বিভিন্ন আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবং সে সমস্ত কারণে মামলার নিষ্পত্তিতে এতদিন সময় লেগেছে। সর্বশেষ তার নিজের বক্তব্য দেবেন বলে আদালতে প্রায় এক বছর সময় ক্ষেপণ করেছেন।

মাহবুবে আলম বলেন, যে চারটি গ্রাউন্ডে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, সেই চারটি গ্রাউন্ডের ব্যাপারেও আমি সুনির্দিষ্টভাবে আমার বক্তব্য রেখেছি। আমি বলেছি, সেই সমস্ত আসামিকে অল্প সাজা দেওয়া হলেও তাকে জামিন দেওয়া যায় যখন দেখা যায় তার সাজা খাটা হয়ে যাচ্ছে, অথচ আপিল শুনানি হচ্ছে না। এখানে ব্যপারটা তা না। পাঁচ বছরের সাজা, তিনি এখন পর্যন্ত খেটেছেন চার মাসের মতো।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, আমি আদালতকে বলেছি, অলরেডি পেপারবুক তৈরি হয়ে গেছে। গতকাল আমাকে পেপারবুক সরবারহ করা হয়েছে অফিস থেকে। আর একটা বিষয় হাইকোর্ট বিবেচনায় নিয়েছেন তিনি নিম্ন আদালতেও জামিনে ছিলেন। কাজেই এখনও জামিন পেতে পারেন। এটার ব্যাপারে বলেছি, তখন যে বিচার হয়েছে তখন তিনি দণ্ডিত ছিলেন না। এখন তিনি দণ্ডিত ব্যক্তি। কাজেই বিচারাধীন মামলায় জামিন দেওয়া আর দণ্ডিত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া একই মানদণ্ডে এটা করা যায় না।

তার চিকিৎসার ব্যাপারে যে কথাটা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি দেখিয়েছি, তাদের নিয়োজিত চিকিৎসকই তাকে (খালেদা জিয়া) শুধু একটি নাপা খেতে বলেছেন। ব্যথার ওষুধ। আর তার যে সমস্ত শারীরিক সমস্যা আছে এগুলো ৩০ বছর যাবত, ২০ বছর যাবত, ১০ বছর যাবত। এটা নতুন কিছু না, বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন, এও আমি বলেছি, তার ইচ্ছামতো তাকে একজন সেবিকা দেওয়া হয়েছে। যেটা জেলকোডের বিধান নাই। আর তার ইচ্ছামতো ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাকে দেখেছেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আবার বাইরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। যেটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছেন। জামিন পাওয়ার জন্য এটা করেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তার যদি এমআরআই দরকার হয় বা সিটি স্ক্যান দরকার হয়, তিনি যেই হাসপাতাল পছন্দ করবেন সেই হাসপাতালে রাষ্ট্রপক্ষ এগুলো করে দেবে। কিন্তু তাকে বাইরে কোনো হাসপাতালে রাখা যাবে না, এটা তার নিজের নিরাপত্তার জন্য।

মাহবুবে আলম আরো বলেন, সর্বশেষ আমি বলেছি, রাষ্ট্র একটি মেডিকেল বোর্ডও করেছেন। সেই মেডিকেল বোর্ড কোনো পরামর্শ দেয় নাই যে, তাকে বাইরের কোনো হাসপাতালে রাখতে হবে।

এখন যেই অবস্থা দাঁড়িয়েছে, পেপারবুক রেডি হয়ে গেছে এ মামলার। যেকোনো দিন হাইকোর্টে এটার শুনানি শুরু হতে পারে। এ অবস্থাতে মামলার শুনানি পেন্ডিং রেখে তিনি জামিন পেতে পারেন না। বরং তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে সেগুলো খণ্ডাতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে ছাড়াই পেয়ে যাবেন, যোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।