ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রাজীবের ভাইদের ক্ষতিপূরণে আদেশ স্থগিত, তদন্তের নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
রাজীবের ভাইদের ক্ষতিপূরণে আদেশ স্থগিত, তদন্তের নির্দেশ রাজীব ও দুইভাইয়ের এ ছবি এখন কেবলই স্মৃতি

ঢাকা: রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

একইসঙ্গে ওই ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী তা নিরুপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই কমিটিকে ৩০ জুনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

পরে প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুইভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেবেন।

মঙ্গলবার (২২ মে) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।  

আদালতে বাস মালিকদেরে পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু ও এবিএম বায়েজীদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান।  রাজীবের পরিবারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

আদেশের পর ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন সেটি স্থগিত করে আপিল বিভাগ সংশ্লিষ্ট কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করতে। যে কমিটি দুর্ঘটনার দায় নিরূপণ করবে। কমিটিকে ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। সে প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট কোর্ট (হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ) রাজীবের ছোট দুইভাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে। ’

বিআরটিসির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘দায়ী হলে বিআরটিসি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত। আমরাও এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের পক্ষে। কিন্তু দুর্ঘটনাটির দায়-দায়ী নিরূপণ না করে তো এটা হতে পারে না। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে যে আদেশটি দিয়েছে, নিঃসন্দেহে এটি বাস্তবসম্মত এবং যথাযথ। ’

গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুইভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন।  

এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ একমাসের মধ্যে দিতে বলা হয় দুই বাস কর্তৃপক্ষকে।  
 
কিন্তু বিআরটিসি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১০ মে আপিল আবেদন করে। ১৩ মে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি ১৭ মে শুনানির জন্য পাঠান।

সে অনুসারে ১৭ মে বৃহস্পতিবার ছিলো আবেদনটি শুনানির জন্য। শুনানিতে বিআরটিসির পাশাপাশি  স্বজন পরিবহনের পক্ষে আইনজীবী হাজির হন। এরপর আদালত আদেশের জন্য ২১ মে দিন ঠিক করেন। কিন্তু সোমবার আদালতে বাস মালিকপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন।  
 
৮ মে হাইকোর্ট রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন ও রাজীবের গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দিয়েছেন।  

ওই হিসাবে একমাসের মধ্যে দুই বাস কর্তৃপক্ষ ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা জমা দেবেন। টাকা জমা দেওয়ার পর আগামী ২৫ জুনের মধ্যে আদালতকে দুই কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে বিষয়টি জানাবেন।
 
২৫ জুন এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন বাকি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ আসতে পারে বলেও জানান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজা।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে কলেজ ছাত্র রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।  
 
হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট।

এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।

এরপর ৬ মে বিষয়টি আদালতকে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আদালত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজীবের দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের জন্য এ আদেশ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮/আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।