সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় মামলা না নেওয়া সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. শামসুল হক কাঞ্চন।
আইনজীবী মো. শামসুল হক কাঞ্চন বলেন, “জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে কিছু লোক সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের মো. ফজলুর করিমের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলা না নেওয়ায় গত ৩ মার্চ হাইকোর্টে এসে রিট করেন ফজলুর করিম। সেই রিট আবেদনের ওপর গত ১০ মার্চ প্রাথমিক শুনানি হয়। ওই দিন আদালত সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য।
“আজ সংশ্লিষ্ট সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম ঘটনার আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে বলে আদালতকে অবহিত করেন। তখন আদালত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিলের নির্দেশ দিয়ে আগামী রোববার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। ”
মামলা না নেওয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতার বিষয়টি অবহিত করার পর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, “ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি কেন তিনি মামলা নিলেন না। ওসি সাহেবরা সব জায়গায় কোর্ট বসিয়ে দেন। তারা কি সালিশ করতে বসেছেন যে, সুবিধামতো হলে মামলা নেবেন। অথচ ওসিরা যেখানে সেখানে কোর্ট বসায়, রাতে কোর্ট বসায়। এত সাহস তারা কোথায় পায়। তারা নিজেরা বিচার বসায় কেমনে?”
আদালত আরো বলেন, “অনেক পুলিশ খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করেন। অথচ অনেকের দেখি ৪-৫টা করে বাড়ি। ”
ঘটনার পর মামলা না নেওয়ায় ফজলুর করিম সাতক্ষীরার এসপি বরাবরে একটি আবেদন দেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, “গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে একদল দস্যু আক্রমণ করে। আমাদের জিম্মি করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার লুটপাট করে। দস্যুরা আমাদের মারপিট করে ও আমাদের পাকা পাচিল ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আমি শ্যামনগর থানার ওসির মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সাহায্য চাইলে তিনি পরে দেখবেন বললে আমি ঘটনাটি কালীগঞ্জ সার্কেলকে (এএসপি) ফোনে বিষয়টি জানাই এবং ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চাই। ”
“তখন শ্যামনগর থানার এএসআই ঘটনাস্থলে যান। এবং শ্যামনগর থানার ওসির সাথে আমাকে মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন। তখন ওসি আমাকে মোবাইল ফোনে বলেন, উপর মহলে নালিস করিস, কাল সকালে থানায় আসবি না হলে তোকে ধরে চালান করে দিবো। পরের দিন আমার পিতা থানায় এজাহার দাখিল করতে গেলে ওসি সাহেব বলেন উপরের মহলে নালিশ করিস তোর মামলা হবে না, কোর্টে মামলা কর। আমার পিতা অনুনয় বিনয় করলে ওসি বলেন, কাল সকালে আবার তদন্ত হবে। পরদিন শ্যামনগর থানার এসআই মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন এবং আমাদের বলেন মামলা হবে না। পারলে চেয়ারম্যানের ওখানে বসে মীমাংসা কর। ”
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কাছে এটি তুলে ধরার পর পুলিশ সুপার ২৬ ফেব্রুয়ারি আইনগত ব্যবস্থা নিতে ওসিকে বলেন। কিন্তু মামলা না নেওয়ায় ফজলুর করিম হাইকোর্টে রিট করেন।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “আদালতকে জানিয়েছি, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ লুটপাটের প্রমাণ পাননি। তবে পাচিল ভাঙার প্রমাণ পেয়েছেন। এটা অবহিত করার পর আদালত বললেন, যেহেতু পাচিল ভাঙা পেয়েছে আংশিক সত্যতা তো পাওয়া গেছে। তাহলে পুলিশ কেন মামলা নেবে না। ”
ওসির মীমাংসার প্রস্তাবের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি বাদীর পারিবারিক বিরোধ হওয়ায় ওসি সাহেব সালিশের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তির কথা বলেছিলেন। এটা শোনার পর আদালত বলেন, পুলিশের কাজ তো এটা না। পুলিশের কাজ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে মামলা নেওয়া। পরবর্তী তদন্তে যদি ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ হয় তাহলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাদ দেবে। ”
১৩ হাজার পুলিশের বিষয়ে এ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এটা হয়তো থানায় যে সকল পুলিশ সদস্য রয়েছে, তাদের মধ্যে হয়তো ১৩ হাজার যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, বাকিরা তো সৎ। তাদের দিয়ে থানা চালাতে পারে। সুতরাং এই ১৩ হাজারের কারণে দুই লাখ পুলিশ সদস্যের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে না। অনেক পুলিশ কষ্ট করে জীবনযাপন করে। ”
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৯
ইএস/এমজেএফ