ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৫০ লাখ টাকা দিতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় পেল গ্রিন লাইন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৯
৫০ লাখ টাকা দিতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় পেল গ্রিন লাইন

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের ওপর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দেয়া সংক্রান্ত আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ এপ্রিল  (বুধবার) প্রতিবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, ১০ তারিখে (এপ্রিল) হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিয়ে যদি আদালতের নির্দেশ পালন না করা হয় তাহলে ১১ তারিখের অগ্রিম  টিকিট তারা বিক্রি করতে পারবেন না।  

প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার আদালতে হাজির হয়ে মালিক চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন-এ তথ্য অবহিত করার পর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) এই আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিন লাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ।

এর আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে নির্ধারিত সময়ে ৫০ লাখ টাকা না দেয়ায় কোম্পানির ম্যানেজারকে দুপুর ২টার মধ্যে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

সে অনুসারে জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার আদালতে হাজির হন।  

আদালতের হাজিরের পর গ্রিন লাইনের ম্যানেজার আব্দুস সাত্তারের কাছে জানতে চান আপনাদের মালিক কোথায়?

জাবাবে ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার বলেন, উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। গত ৩১ মার্চ ভারতে গিয়েছেন। ৯ এপ্রিল দেশে ফিরবেন।

আদালত বলেন, ৩১ মার্চ গ্রিন লাইন পারিবহনের মালিক কখন গেছেন? আব্দুস সাত্তার বলেন, সকালে গেছেন।

তখন আদালত বলেন, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় ও পরে আমাদের আদেশটা কি ওনাকে অবহিত করেছেন? আপনাদের কোনো নির্দেশ দিয়ে যাননি?

জবাবে আব্দুস সাত্তার বলেন, টেলিফোনে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

প্রতিষ্ঠানটির লেনদেনের বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে আব্দুস সাত্তার বলেন, উনি নিজেই করেন। তার স্বাক্ষরেই চেকে আর্থিক লেনদেন হয়।

পরে আদালত গ্রিন লাইনের আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনার মক্কেল যে দেশে নেই এ বিষয়ে আদালতে কোনো আবেদন দাখিল করেননি। আপনার উচিত ছিল এ ধরনের আবেদন দাখিল করা। আপনি কোনো পদক্ষেপই নেননি। এগুলো টলারেট করবো না।

তিনি ৯ তারিখ দেশে আসবেন, ১০ তারিখ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে হলফনামা দেবেন। না হলে সব বাস সিজ করে ফেলবো।

এছাড়াও আদালত বলেন,  ১০ তারিখে আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। যদি আদেশ বাস্তবায়ন না করেন তাহলে ১১ তারিখের কোনো টিকিট বিক্রি করবেন না। আপনারা তো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেন। জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলবেন না।

আদেশের পরে অজি উল্লাহ বলেন, গ্রিন লাইনের পরিবহনের মালিক আলাউদ্দিন সাহেব বয়স্ক ব্যক্তি। জেনারেল ম্যানেজারের ভাষ্যমতে, চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন। এ জন্য আজকে আদালতে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিল করা যায়নি। আদালত তার জেনারেল ম্যানেজারের বক্তব্য শুনে পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন ১০ তারিখ (এপ্রিল)। ১০ তারিখে হলফনামা দাখিলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  

‘যদি এটা করতে তারা ব্যর্থ হন তাহলে পরবর্তী আইনানুগ আদেশ দেবেন আদালত। আদালত বলেছেন, ১০ তারিখে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিয়ে যদি আদালতের নির্দেশ পালন না করে ১১ তারিখ তারা টিকিট বিক্রি করতে পারবেন না। ’ 

গত ৩১ মার্চ রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার আদেশ বহাল রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন হাইকোর্ট বুধবারের (০৩ এপ্রিল) মধ্যে টাকা দিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার খন্দকার শামসুল হক রেজা আদালতে বলেন, গ্রিন লাইন পরিবহন আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তখন গ্রিন লাইনের আইনজীবী অজি উল্লাহ আদালতে জানান যে, গ্রিন লাইনের প্রোপ্রাইটার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন।

এ সময় আদালত বলেন, কোথায় গেছেন? কবে ফিরবেন, কবে গেছেন? তাহলে তার ম্যানেজারকে ডাকুন। অন্যথায় তাকে অ্যারেস্ট করার ব্যবস্থা করবো? নাকি তার সমস্ত গাড়ি সিজ (জব্দ) করার ব্যবস্থা করবো?
জবাবে গ্রিন লাইনের আইনজীবী বলেন, আমি ম্যানেজারকে জানাবো। এ সময় আদালত বলেন, তাকে আসতে বলেন দুইটার মধ্যে।

অজি উল্লাহ বলেন, আমি দুইটার মধ্যেই কোম্পানির ম্যানেজার কে আদালতে আসতে বলছি। এরপর আদালত বিষয়টি দুপুর দুইটা পর্যন্ত মুলতবি রাখেন।

গত ১২ মার্চ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

৫০ লাখ টাকা দেয়ার আদেশের পাশাপাশি রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং কাটাপড়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছিলো। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে বিফল হয় গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রাসেলের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাস কর্তৃপক্ষ তার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।

রিট আবেদনটি দায়ের করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শঙ্কায় পড়ে তার জীবন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।