ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৫ লাখ দিলো গ্রিনলাইন, বাকি টাকা এক মাসের মধ্যে  

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
৫ লাখ দিলো গ্রিনলাইন, বাকি টাকা এক মাসের মধ্যে  

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভারের ওপর গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইন এক মাস সময় পেয়েছে।

বুধবার (১০ এপ্রিল) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সময় দেন।
 
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

গ্রিনলাইনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজি উল্লাহ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী।
 
এর আগে সকালে অজি উল্লাহ বলেন, গ্রিনলাইনের মালিক চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। তিনি আদালতে এসেছেন। আমাদের কিছু জটিলতা আছে। এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে এক মাস সময় দরকার।
 
এসময় আদালত বলেন, কিছু বাস্তবায়ন করে বিকেল ৩টায় আসুন।
 
এরপর বিকেলে আদালত কক্ষেই রাসেল সরকারকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।
 
গতবছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
 
এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
 
সম্প্রতি রাসেলের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাস কর্তৃপক্ষ তার কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। পরে গত ১২ মার্চ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার আদেশের পাশাপাশি রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং কাটাপড়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছিলো। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে ৩১ মার্চ বিফল হয় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।
 
এদিকে হাইকোর্ট বিভাগ ৩ এপ্রিলের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে ৪ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে টাকা না দেওয়ায় ৪ এপ্রিল কোম্পানির ম্যানেজারকে দুপুর ২টার মধ্যে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার হাজির হয়ে গ্রিনলাইনের মালিক দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য রয়েছেন বলে আদালতকে অবহিত করেন। একইসঙ্গে মালিক ৯ এপ্রিল ফিরবেন বলে জানান। এরপর আদালত তাদের আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ এপ্রিল (বুধবার) প্রতিবেদন দিতে বলেন।

বিকেলে আদালত বলেন, একমাস সময় চাচ্ছেন সময় দিচ্ছি। এই এক মাসের মধ্যে টাকা দিয়ে দেবেন। এরপরে আর কোনো কথা নেই। এই এক মাসের মধ্যে বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে দেবেন, এক। দুই নম্বর হলো, ওকে (রাসেল সরকার) ট্রিটমেন্টের জন্য ইমিডিয়েটলি যেখানে ভর্তি করা প্রয়োজন সেখানে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাবেন।

এক পর্যায়ে আদালতে রাসেল সরকার বলেন, এখন পর‌্যন্ত বলছি গ্রিনলাইন পরিবহন আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমার বাবা-ভাই গিয়েছিল। গ্রিনলাইনের যিনি মালিক তিনি বলেছিলেন যে, আমি হজে যাচ্ছি। রাসেল আমার ছেলের মতো। আমার ছোট ছেলে অ্যাকসিডেন্ট করেছে তার জন্য ওমরাহ করতে যাচ্ছি, রাসেলের জন্য আমি দোয়া করব। রাসেলের জন্য আমি ভাল কিছু করে দেব। ওমরাহ থাকাকালীন আমার অফিসের স্টাফরা যোগাযোগ করবে। এর পরেরদিন হসপিটালে দু’জন লোক গিয়েছিল। তারা নাম্বর নিলো যে আমার খোঁজ-খবর রাখবে।

গ্রিনলাইনের আইনজীবী অজি উল্লাহকে দেখিয়ে রাসেল বলেন, উনি যে বললেন চিকিৎসার অফার দিয়েছেন, টাকার অফার দিয়েছেন, এ ধরনের কোনো কিছু হয়নি।  

এরপর আদালতে কথা বলেন গ্রিনলাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিন। আদালত তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি এত বড় একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। একটি পরিবহন চালান। এর বেশ সুনামও আছে। আমরাও চড়েছি আপনার বাসে। সবারই একটা দায় আছে। এই যে অ্যাকসিডেন্ট হলো, এর একটি নীতিগত দায়িত্ব আছে। নাগরিক দায়িত্ব আছে। এই যে এতদিন হলো কোনো খোঁজ-খবর নিলেন না, এটা কি কোনো নীতি? আপনারা যাকাত দেন। মানুষকে সাহায্য করেন বিভিন্নভাবে। এই যে আপনার এত বড় কোম্পানি আপনার কর্মচারীরা এমনটা না করলেও পারতো।

তখন আলাউদ্দিন বলেন, আপনি অনুমতি দিলে আমি কিছু কথা বলবো। ......এই ছেলেটার যখন অ্যাকসিডেন্ট হলো তার পর পর আমার দু’টি অ্যাকসিডেন্ট হলো। আমার ওয়াইফ অ্যাকসিডেন্ট করেছে। তার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে একটা, আমার বড় ছেলে চির অন্ধ হয়ে গেছে। আমার লিভার নষ্ট হয়ে গেছিল। আমি হসপিটালে ছিলাম। আমাকে ছেলেরা সিঙ্গাপুরে নিয়ে একমাস চিকিৎসা করিয়েছে। ব্যবসায় লস হচ্ছে। পৈত্রিক সম্পদ বিক্রি করে ব্যবসা করছি। প্রায় একশ কোটি টাকা দেনা হয়ে গেছি। আমি খোঁজ-খবর নিয়েছি। একটা এনজিও চিকিৎসা করাচ্ছে। বলেছিল চিকিৎসা করে পরে দেখা করবে।

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, সাভারের সিআরপি। ওখানে নাকি খরচ কম, ভালো চিকিৎসা। সেখানে নিয়ে একটা পা লাগানোর ব্যবস্থা করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

গ্রিনলাইন পরিবহনের মালিক তখন বলেন, আমি ওনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যতটুকু আমার সাধ্যে কুলায় আমি করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।