শ্লীলতাহানির পর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বিষয়টি নজরে আনার পর এমন মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।
পরে তিনি সাংবাদিককের বলেন, ‘আসলে এটা তো হৃদয়বিদারক ঘটনা। রাতে আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন ঘুমাতে পারিনি। সকাল বেলা বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করি খবরের কাগজগুলো নিয়ে। ’
‘আমি বলার চেষ্টা করেছি, এই মেয়েটাই যে আগুনে পুড়েছে তা না, পুরো বাংলাদেশের মানুষ এই কয়দিন, যতদিন সে ঢাকা মেডিকেলে ছিলো মনে হয়েছে আমরা সবাই পোড়ার কষ্ট পাচ্ছি। এটা স্বাভাবিক না। সে যতদিন কষ্ট পেয়েছে, আমরাও সে কষ্টটা অনুভব করেছি। সে হয়তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে! কিন্তু আমাদেরকে তো রেখে গেছে। ’
‘তাই এ ঘটনাটা বা এ সংক্রান্ত মামলা একজন এসআইকে তদন্তের ভার না দিয়ে এটার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ চাচ্ছি। মনে হচ্ছে এই ঘটনায় বড় বড় দলের নেতারা থাকতে পারেন। রিলিজিয়াস সেনসিটিভিটি অর্থাৎ ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপার ধাকতে পারে। পুরো দেশের মানুষ বসে আছে এ ঘটনার একটা ফুল ফ্লেজের একটি তদন্ত দেখার জন্য। ’
ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন আরো বলেন, ‘বিষয়টি বলার পর বিচারপতি মহোদয় তখন বললেন যে, আমরা যতটুকু জানি যে এ ঘটনাটা পিবিআইকে ট্রান্সফার করা হয়েছে তদন্তের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে এটা তদারকি করছেন। তারপরও আমরা সমভাবে ব্যথিত... এজন্য আপনারা খেয়াল রাখেন আমরাও খেয়াল রাখছি, কোনো কারণে যদি তদন্তের কোনো জায়গায় কোনোভাবে যদি মনে হয় গাফিলতি আছে, আপনারা চলে আসবেন আমরা হস্তক্ষেপ (ইন্টারফেয়ার) করবো। ’
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নুসরাত জাহান রাফি।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।
এই ছাত্রীর পরিবারের ভাষ্যে, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে না ফেরার দেশে চলে যায় নুসরাত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
ইএস/এমজেএফ