বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দরখাস্ত করলে দরখাস্ত আদালতে যাবে এবং আদালত সিদ্ধান্ত দিবেন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিজিএমইএ সভাপতির কাছে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ একটি লিগাল নোটিশ দেন। যাতে বলা হয়, গত বছরের ২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অঙ্গীকারনামা দিয়ে শেষবারের মতো চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএমইএ ভবন খালি ও ভাঙার এক বছরের সময় বাড়িয়ে নেয়।
সে অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছিল, এ সময়ের পর সময় বাড়াতে আর কোনো আবেদন করবে না বিজিএমইএ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অফিস রেকর্ডে দেখা গেছে বিজিএমইএ ভবন খালি করতে আরও এক বছর সময় চেয়ে একজন অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে অন রেকর্ডের মাধ্যমে একটি আবেদন করা হয়েছে। এটি আপিল বিভাগের গত বছরের ২ এপ্রিলের সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন।
এরপর বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান উত্তরায় তাদের নতুন ভবনে এক সভায় বলেছেন, ভবন ভাঙতে সময় চেয়ে আর কোনো আবেদন করা হয়নি। যারা আবেদন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশ হলো এটা ভাঙা। প্রশ্ন হলো- ভাঙার আদেশটা বিজিএমইএ-এর প্রতি দেয়া আছে। তারা যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয় সেক্ষেত্রে রাজউককে দেয়া আছে।
ভাঙার খরচের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, রাজউক ইতোমধ্যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে-ভাঙার জন্য আলাদা কোনো খরচ হবে না। মালামাল নিয়ে যাবে। সে দামটা কোটেশন দিতে হবে।
বিজিএমইএ ভবন থেকে সরতে নতুন করে আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা বিজিএমইএ করবে কিনা আমি জানি না। কিন্তু আদালত নির্দেশ দিয়েছেন আগেই এবং বলেছেন যে, তারা যদি না ভাঙে সে ক্ষেত্রে রাজউক ভাঙবে।
‘... দরখাস্ত করলে দরখাস্ত আদালতে যাবে এবং আদালত সিদ্ধান্ত দিবেন, আমার মনে হয় না আদালত এ ব্যাপারে কোনো রকম নমনীয় হবেন,’ যোগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল ।
এদিকে ভবনটি অপসারণের অংশ হিসেবে এরমধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেয়ার পর মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে রাজউক বিজিএমইএ ভবন সিলগালা করে দেয়। যদিও মালামাল সরাতে বৃহস্পতিবার সিলগালা খুলে দেয় রাজউক। অবশ্য দিন শেষে আবার সিলগালা করে দেয়।
এর মধ্যে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর এ ভবন কোনো প্রতিষ্ঠান ভাঙবে তা ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান না পাওয়া গেলে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষ থেকে এ ভবন ভাঙা হবে।
১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ভবনটির উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে এটি বিজিএমইএ-এর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএ-কে।
একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ-এর আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়। পরে আপিল বিভাগ তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেন।
এ সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা আরও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে আরও একবছর সময় দেন।
এ মামলার হাইকোর্টে থাকা অ্যামিকাস কিউরি ২০১৮ সালের ০২ এপ্রিল মনজিল মোরসেদ বলেছেন, ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএমইএ সময় পেলো। অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল থেকে এটা ভাঙতে হবে।
২০১৮ সালে ০২ এপ্রিল এ বিষয়ে বিজিএমইএ-এর আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অঙ্গীকারনামায় বলেছি একবছর সময় পেলে আমরা আর সময় চাইবো না। আদালতের যে আদেশ দেয়া হয়েছে সেটা মানবো। এ আন্ডারটেকিংয়ের জন্য বিজিএমইএ দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগের রায়ে বিজিএমইএকে অবিলম্বে নিজেদের খরচে ওই ভবন ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছিল। তারা তা না করলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে এবং ভবন ভাঙার খরচ বিজিএমইএ দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
ইএস/এমএ