এবারও একটি জাতীয় দৈনিকে গত ১৮ এপ্রিল এ রকম আরেক জাহালমের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে ৩ বছর ধরে কারাগারে ‘নির্দোষ’ আরমান (৩৬)।
প্রকাশিত এ প্রতিবেদন যুক্ত করে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে রোববার হাইকোর্টে রিটটি করে ‘ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপনের পর আগামী মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।
আবেদনে কারগারে থাকা আরমানকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা ও আরমানের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গত ৩ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান।
শুধু বাবার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে, প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুলিশের ভুলে অথবা গোপন কারসাজিতে মৃত ইয়াছিন ওরফে মহিউদ্দিনের ছেলে শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ ৩ বছর ধরে কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন আরমান। শুধু বাবার নামে (মৃত ইয়াছিন) মিল থাকায় শাহাবুদ্দিনের বদলে পল্লবীর ১৩ হাটস, ব্লক-এ, সেকশন-১০ তেজগাঁও নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্পের বাসিন্দা মৃগীরোগী আরমানকে বিনা অপরাধে সাজা ভোগ করতে হচ্ছে।
২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকালে আরমানকে গ্রেফতার করে পল্লবী থানা পুলিশ। এর ৩ দিন পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সেই থেকে তিনি কারান্তরীণ। আর সাজাপ্রাপ্ত মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এখনো রাজধানীর মিরপুর ১০, ১১, ১২ ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা করছেন।
আরমানের মা এবং আরও কিছু সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট গভীর রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ পিস ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের ৭ নম্বর টিম। তিনি তখন সপরিবারে সেখানে বসবাস করতেন। ডিবির পরিদর্শক আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে চলা ওই অভিযানে শাহাবুদ্দিন ছাড়াও গ্রেফতার হয় তার দুই সহযোগী সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগর। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য আইনের ১৯(১)/৩(ক) ধারায় মামলা হয়। মামলা নম্বর: ৬১ (৮)০৫)।
ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের এসআই মো. সিরাজুল ইসলাম। মামলায় দুবছর জেল খেটে ২০০৭ সালের ৫ মার্চ জামিন পান শাহাবুদ্দিন। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্বাক্ষরযুক্ত জামিননামার মাধ্যমে জামিন নেন। জামিনদার হন তার ভাই মানিক। কিন্তু এর পর তিনি আর আইনের মুখোমুখি না হয়ে ফেরারি হয়ে যান। ওই মামলায় ২০১২ সালের ১ অক্টোবর শাহাবুদ্দিন ও তার দুই সহযোগীর প্রত্যেকের ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী ঢাকার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফারুক আহম্মদ। পলাতক শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পল্লবীর ১৩ হাটস, ব্লক-এ, সেকশন ১০ নম্বর এলাকায় অভিযান চালায় পল্লবী থানার পুলিশ। এ অভিযানে ছিলেন তৎকালিন ওই থানার এসআই রাসেলও যিনি বর্তমানে মিরপুর মডেল থানায় কর্মরত। আরমান বাসায় নাশতা সেরে চা পানের জন্য পাশের একটি চায়ের দোকানে যায়। অভিযানকারীরা সেখান থেকে তাকে আটক করে।
বাংলাদেশ: ১৩২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
ইএস/ওএইচ/