ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

হলি আর্টিজান মামলায় আরো দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৯
হলি আর্টিজান মামলায় আরো দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হলি আর্টিজানের ফাইল ছবি

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের আরো দুই জন সাক্ষী স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ১৩ মে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (০৬ মে) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী দুই সাক্ষীর হাজিরা দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ধার্য করেন।

এ দিন যে দুজন সাক্ষ্য দিলেন তারা হলেন— মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার ৪৩২/এ এর বাড়ির মালিক মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে দুলাল এবং মো. সোহরাব আলী। এ দুজনসহ এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

গত ২৯ এপ্রিল ইয়ং ফোর্সের সুপারভাইজার লতিফুর বারী ও বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কর্মকর্তা  সাইফুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। লতিফুর বারী বলেছিলেন, ঘটনার দিন তিনি হলি আর্টিজান বেকারিতে দায়িত্বে ছিলেন। রাত ৯টার দিকে কয়েকজন যুবক ব্যাগ নিয়ে বেকারিতে ঢোকেন, এর কিছুক্ষণ পরে গুলির শব্দ শুনতে পান।

গত ২৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষী দিয়েছিলেন— ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) মো. জালাল উদ্দিন এবং নুরুল ইসলাম নামে এক বাড়িওয়ালা। জালাল উদ্দিন তার জবানবন্দিতে বলেন, হলি আর্টিজান বেকারির পাশের বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ড হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন, ঘটনার পরে তিনি ঘটনাস্থলে যান পরবর্তীতে পুলিশ জব্দ তালিকা তৈরি করলে তিনি তাতে স্বাক্ষ্য করেন।

অপর সাক্ষী বাড়িওয়ালা নুরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসীরা তার বাসায় ভাড়া থাকতেন, ঘটনার পর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের ছবি দেখে তিনি আসামিদের চিনতে পারেন।

গত ১৭ এপ্রিল আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম, মমতাজ পারভীন ও রিনা খানম।

গত বুধবার (৩ এপ্রিল) নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রোভিসি অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহসান তার জবানবন্দিতে জানান, তার স্ত্রী নাসিমা আক্তারের নামে বসন্ধুরা আবাসিক এলাকায় বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসীরা ভাড়া থাকতেন। ঘটনার আগে তারা যে সন্ত্রাসী তা তিনি জানতেন না। ঘটনার পর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের ছবি দেখে তিনি তাদের চিনতে পারেন।

আরেক সাক্ষী মতিয়ার রহমান জানান, নিহত সন্ত্রাসী তানভির কাদের চৌধুরী তার প্রতিবেশী ছিলেন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ছবি দেখেই তাকে তিনি চিনতে পারেন।

গত ২৭ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন শাহআলী থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়া।

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আসামি মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন, শফিকুল ইসলাম ওরফে খালেদ, হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী ও হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এর আগে গত ২১ মার্চ হামলার ঘটনায় নিহত তৎকালীন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিনের স্ত্রী রেনকিমসহ পাঁচজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য সাক্ষীরা হলেন শরিফুল, আ. সবুর খান, নুরজাহান ও দাউদ।

গত ৬ ফেব্রুযারি নিহত এসি রবিউল ইসলামের ছোট ভাই শামসুজ্জামান ও খালাতো ভাই আনোয়ার হোসেন এবং রেস্তোরাঁর ক্রেতা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভীনের সাক্ষ্য দেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন।

এরপর ৪ জুলাই গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার পর গত ৪ ডিসেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এ মামলার আসামিরা হলেন— হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

২০১৮ সালের ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করার পর ২৬ নভেম্বর এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।

সম্প্রতি এ মামলার পলাতক আসামি মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনকে গত ১৯ জানুয়ারি রাতে গাজীপুরের বোর্ড বাজারের একটি বাস থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। আর শরিফুল ইসলাম ওরফে আব্দুস সবুর খানকে ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
এমএআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।