ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নদ-নদী জীবন্ত সত্তা: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৯
নদ-নদী জীবন্ত সত্তা: হাইকোর্ট

ঢাকা: দেশের মধ্যে এবং দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান সব নদ-নদীকে আইনি ব্যক্তি, আইনি সত্তা ও জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এসব নদ-নদী দখলকারী ও দূষণকারীদের ব্যাংক ঋণের এবং সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।

সোমবার (০১ জুলাই) তুরাগ নদী সংক্রান্ত এক রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। ২৮৩ পৃষ্ঠার ওই রায়ে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইট অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১৬ সালের রিটে জারি করা রুলের ওপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ঐতিহাসিক রায় দেন।

সোমবারের রায় থেকে উদ্ধৃত করে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, পরিবেশ ও জলবায়ুসহ নদ-নদী ইত্যাদি জাতীয় সম্পত্তি। তাই এসব দখল ও দূষণকারীদের দেশের ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ছয় মাসের মধ্যে হলফনামা আকারে আদালতকে জানাতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তারা সব ধরনের ব্যাংক ঋণের অযোগ্য মর্মে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

রায়ে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে তুরাগসহ দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিলের আইনগত অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সব নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও সমুদ্র সৈকতের সুরক্ষা, সৌন্দর্য্য বাড়ানো এবং বহুমুখী উন্নয়নে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। একইসঙ্গে নদীরক্ষা কমিশন আইন-২০১৩ সংশোধন করতে হবে। পাশাপাশি নদীরক্ষা কমিশনকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ভবিষ্যতে নদ-নদীর পাশ্ববর্তী এলাকায় যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিজিটাল ডাটাবেইস তৈরির জন্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের ভৌগলিক অবস্থান নির্ণয় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব ডাটাবেইস সব ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। যাতে দেশের যে কোনো নাগরিক নির্ধারিত ফি দিয়ে কপি সংগ্রহ করতে পারেন।  

রায়ে তুরাগ নদ দখলকারীদের ৩০ দিনের মধ্যে তাদের সব স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় দখলদারদের খরচে সেখান থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি নদী বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নদ-নদী সংরক্ষণ এবং দূষণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষা সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মনজিল মোরসেদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ০২,২০১৯
ইএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।