এক আইনজীবীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৮ জুলাই) বিচারপতি এফআরএম নামজুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।
আদেশের আগে আদালত পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনাদের উচিত হবে মিন্নির প্রতি অতি উৎসাহী না হয়ে মামলার মূল আসামির দিকে নজর দেওয়া। আদালত বলেন, পুলিশ যদি সতর্ক থাকতো তাহলে রিফাতকে মরতে হতো না।
শুনানিতে ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, পুলিশের তদন্তে মিন্নির বাবার আস্থা নেই। মিন্নিকে প্রথমে সাক্ষী করা হলেও এখন আসামি করা হয়েছে। এসময় আদালত বলেন, একজন সাক্ষী যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তকে তাকে আসামি করা যাবে না? আদালত বলেন, দু’জন আসামির জবানবন্দিতে মিন্নির সম্পৃক্ত থাকার তথ্য এসেছে। তাছাড়া মিন্নির বাবা যদি ক্ষুব্ধ হন তবে তো তিনি নিজেই আদালতে আসতে পারেন। এটা স্বাধীন দেশ। তার পরিবারের কেউ আসতে পারেন। আপনার আবেদন করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।
ইউনুছ আলী আকন্দ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়ার আবেদন জানালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বিরোধিতা করে বলেন, তদন্ত কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। এই মুহূর্তে তদন্তে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।
তখন আদালত বলেন, আমরা তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।
২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাতের মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড মঙ্গলবার (২ জুলাই) ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিও গ্রেফতার হন।
পরে ১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
পরদিন ১৭ জুলাই বুধবার বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু ওইদিন মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গত ২১ জুলাই বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে ২৩ জুলাই জেলা ওদায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে জামিন আবেদনের পর ৩০ জুলাই সেই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
ইএস/এএ