ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

চামড়ার নজিরবিহীন দরপতন: বিচারিক তদন্ত চেয়ে রিট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
চামড়ার নজিরবিহীন দরপতন: বিচারিক তদন্ত চেয়ে রিট ফাইল ফটো

ঢাকা: চামড়ার নজিরবিহীন দরপতনের কারণ খুঁজতে বিচারিক তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।

রোববার (১৮ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন মো. হানিফ (ফরহাদ) এ রিট আবেদন করেন। রিটে বাণিজ্য, শিল্প সচিব, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টকে বিবাদী করা হয়েছে।

আবেদনে চামড়ার অপ্রত্যাশিত দরপতন প্রতিরোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, দরপতনের কারণ খুঁজতে জুডিশিয়াল (বিচারিক) তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এর জন্য দায়ীদের ব্যবসায়িক নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।  

এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করা হয়েছে বলে জানিয়ে ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন বলেন, রোববার (১৮ আগস্ট) রিটটি দু’টি বেঞ্চে উপস্থাপন করা হলে আদালত শুনানির জন্য তা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সোমবার (১৯ আগস্ট) অন্য একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করবো।

আবেদনে দৈনিক কালের কণ্ঠের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। ‘গরিবের হকে সিন্ডিকেটের থাবা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে এবার ‘গরিবের হক’ কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে বড় ধস নেমেছে। বাড়তি মুনাফার লোভে ট্যানারির মালিকদের বেশির ভাগই সিন্ডিকেট করে কোরবানির পশুর চামড়া কিনছে না। অল্প যা বিক্রি হয়েছে, তা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে অনেক কমে, নামমাত্র মূল্যে। এতে চামড়া সংগ্রহকারীরা বিপাকে পড়েছে। চামড়া পচে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে নিরুপায় হয়ে অনেকে সংগৃহীত চামড়া রাস্তায় বা নদীতে ফেলে দিচ্ছে। মাটির নিচেও পুঁতে ফেলছে অনেকে।

ঈদের পরের দিন মঙ্গলবার থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার জালকুড়ির ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তায় কয়েক হাজার কোরবানি পশুর চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ফেলে রাখা অন্তত ২০ ট্রাক চামড়া ডাম্পিং স্পটে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় আরও অন্তত ২৫০টি পশুর চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর হাফিজিয়া হোসেনিয়া দারুল হাদিস কর্তৃপক্ষ পুঁতে ফেলেছে নষ্ট হয়ে যাওয়া ৯০০ চামড়া। কোথাও মাত্র ৫০ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। আবার, ন্যায্যদামে চামড়া কিনে আড়তদারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলার মৌসুমী ব্যসায়ীরা।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির পশুর যে চামড়া দুই-আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এবার তা বিক্রি করতে হয়েছে ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। ক্রেতার ঘাটতি থাকায় দাম নির্ধারণ ছাড়াই ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে রাজধানীর মসজিদ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কোরবানির চামড়ার এ দশা নিয়ে নগরবাসী, জনপ্রতিনিধি, মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মসজিদ-মাদ্রাসার নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। নামমাত্র দরে চামড়া বিক্রির চেয়ে তা ফেলে দেওয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন তারা।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আড়াই লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছে গত সোমবার (১২ আগস্ট)। এছাড়া, মঙ্গল ও বুধবার আরও ৩০ হাজারের মতো পশু কোরবানি হয়েছে। একই সঙ্গে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছে ঈদের দিন। এরপরের দুই দিনে আরও ৫০ হাজারের মতো পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে।  

তিন বছর আগেও পাঁচ লাখ পশুর চামড়া গড়ে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করে ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাওয়া যেতো। এ অর্থ মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিম ও গরিবদের দান করা হতো। কিন্তু, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এবার রাজধানীতে চামড়াপ্রতি গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি দিতে রাজি হয়নি। ছাগলের চামড়া ১০ টাকার বেশিতে নিতে চাননি। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় মৌসুমী ক্রেতাদের না পাওয়ায় দামদর ঠিক না করেই চামড়া আড়তদারদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, চামড়া বিক্রি বাবদ কত টাকা আসবে, সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীদের কারসাজি:
চামড়ার বাজারে ধস নামার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গত বুধবার (১৪ আগস্ট) রংপুরের শালবন এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ করেন তিনি। চামড়ার এমন দশা হওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঈদের পরদিনই জরুরি বৈঠক করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়, যাতে কোরবানির চামড়া সংগ্রহকারীরা ন্যায্যমূল্য পান। কিন্ত, তাতে আপত্তি তুলেছেন ট্যানারি মালিকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
ইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।