ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যেসব বিবেচনায় জামিন পেলেন মিন্নি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
যেসব বিবেচনায় জামিন পেলেন মিন্নি

ঢাকা: বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, গণমাধ্যমে পুলিশ সুপারে বক্তব্য ও আসামি মহিলা- এ রকম কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) জামিনের রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় পুলিশ লাইনসে আটক ও গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের আগে  দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

‘সুতরাং আসামি তদন্তকে প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকা সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার ব্যতিক্রম অর্থাৎ আসামি একজন মহিলা।

এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেওয়া ন্যায়সঙ্গত’।

আরও পড়ুন: অবশেষে হাইকোর্টে মিন্নির জামিন

এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নির জামিন প্রশ্নে জারি রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। তবে মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থেকে মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারবেন না।

এদিকে মিন্নির জামিনে তার বাবা সন্তোষ প্রকাশ করলেও রাষ্ট্রপক্ষ বলছে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করার কথা জানিয়েছে।

মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এ এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরওয়ার হোসাইন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাহানা পারভীন।

এছাড়া জামিনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।

আরও পড়ুন: এটি আমার বিজয়: মিন্নির বাবা

১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওই দিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওইদিন মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এরপর ২৩ জুলাই মিস কেস দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই এ জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানির পর আদালত জামিন আবেদন নাকচ করেন। পরে হাইকোর্টে আবেদনের পর গত ৮ আগস্ট  বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে গেলে আইনজীবীরা আবেদন ফেরত নেন।

পরবর্তী বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে শুনানির পর ২০ আগস্ট এক সপ্তাহের রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সিডি (কেস ডকেট) নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। এছাড়া মিন্নির সংশ্লিষ্টতার বিষয় জানিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে পুলিশ সুপারকে (এসপি) লিখিত ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়।

সে অনুসারে ২৮ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা কেস ডকেট নিয়ে হাজির হন। ওইদিন শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
ইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।