ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সেই জামসুকে মুক্তির আদেশ, ৬ পুলিশকে শোকজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯
সেই জামসুকে মুক্তির আদেশ, ৬ পুলিশকে শোকজ প্রতীকী

ঢাকা: আসামি না হয়েও শুধু নামের মিলে পুলিশের ভুলে গ্রেপ্তার হয়ে  কিশোরগঞ্জ কারাগারে থাকা জামসু মিয়াকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ইটনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ছয় পুলিশ সদস্যকে শোকজ করা হয়েছে।

সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন পুলিশ প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং মামলার বাদীর বক্তব্য শুনে এ আদেশ দেন।

আসামি না হয়েও পুলিশের ভুলে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার উদিয়ার পাড়ার (স্কুল পাড়া) সিরাজুল হকের ছেলে মো. জামসু মিয়াকে গত ৮ আগস্ট পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

আদালত ভুল আসামি জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামানসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

অপর পাঁচ পুলিশ সদস্য হলেন- পরোয়ানা তামিলকারী অফিসার এসআই শামছুল হাবীব, এসআই ফারুক আহমেদ, তিন এএসআই আব্দুল হালিম, উজ্জ্বল ও আজিজুল।

জামসু মিয়ার পক্ষে আইনজীবীদের এক আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

এর আগে আদালতের আদেশ অনুযায়ী গত ৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ওসি মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামান আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মূল আসামি মো. জামসু মিয়া (সাগর), পিতা- সিরাজ সিয়ার বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা পাওয়ার পর তা তামিলের জন্য এসআই শাসছুল হাবীবের নামে হাওলা করা হয়। যা গত ৮ আগস্ট এসআই ফারুক আহমেদ, তিন এএসআই আব্দুল হালিম, উজ্জ্বল ও আজিজুল সোর্সের দেওয়া তথ্য মতে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন জামসু মিয়াকে। তবে গ্রেপ্তারকৃত জামসু মিয়া ঢাকার আদালতে কোনো মামলা নেই বলে জানায়। তিনি ভুল শিকার করে ক্ষমাসহ গ্রেপ্তারকৃত জামসু মিয়াকে মুক্তির আবেদন করেন।

সোমবার শুনানির সময় আদালতে মামলার বাদী মাহুরা খাতুন উপস্থিত হন। তিনিও গ্রেপ্তারকৃত আসামি তার স্বামী নন বলে আদালতকে জানান।

অন্যদিকে আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ ৩৩ দিন কারাগারে থাকা জামসু মিয়ার মুক্তি এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন।

আদেশ দেওয়ার পর আদালতে উপস্থিত জামসু মিয়ার ছেলে মো. তুষার মিয়া এবং বোন জামাই কাঞ্চন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, জামসু মিয়াকে গত ৭ আগস্ট রাতে পুলিশ ঘরে ঢুকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। তারা কোনো কাগজ না দেখিয়ে থানায় যেতে বলে। পরদিন সাবেক চেয়ারম্যান ও এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে থানায় যাই। সেখানে জামসু মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকায় কোনো মামলা নেই বললেও তারা কোনো যাচাই বাছাই না করেই আদালতে যেতে বলে।

এদিকে মামলার বাদী মানহুরা বাংলানিউজকে বলেন, তার স্বামী জামসু মিয়ার (সাগর) বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে তিনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলার পর তিনি একবার আদালতে আসেন এবং জামিন নেন। পরবর্তীতে সে ২০১৬ সালে মরিশাস পালিয়ে যায়। এখনো তিনি ওখানেই আছেন।  

গত ২৫ আগস্ট (রোববার) একই আদালত গ্রেপ্তার হওয়া আসামি জামসু মিয়াকে কারাগারে পাঠান। জামসু মিয়া ভিন্ন ব্যক্তি কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামানকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা সিএমএম আদালতে ২০১৫ সালের ১১ জুন জনৈক মানহুরা খাতুন (২৬) তার স্বামী কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার মো. সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. জামসু মিয়ার (সাগর) বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে (সিআর ২১৯/২০১৫) একটি মামলা করেন।

মামলায় আসামি গত বছরের ১ মার্চ থেকে পলাতক। ওই মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আসামির অনুপস্থিতিতে ১ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের রায় দেন।  

রায়ের সময় আসামি পলাতক থাকায় আদালত আসামির স্থায়ী ঠিকানায় পুলিশ সুপারের মাধ্যমে একটি সাজা পরোয়ানা জারি করেন। ইটনা থানায় ওই পরোয়ানা পৌঁছানোর পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামান গত ২৫ জুলাই ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামছুল হাবিবকে পরোয়ানা তামিলের জন্য দায়িত্ব দেন।  

এরপর ৭ আগস্ট নামের মিলে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার সিরাজুল হকের ছেলে মো. জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ৮ আগস্ট তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠান।

এরপর গত ২২ আগস্ট রায় দেওয়া আদালতে ভুক্তভুগী মো. জামসু মিয়ার আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ ভুল আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে জামিনের আবেদন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯,২০১৯
এমএআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।