ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) নুসরাত হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তৃতীয়দিন রাষ্ট্রপক্ষকে আইন সহায়তা দেওয়ার জন্য ফেনী আইনজীবী সমিতির পক্ষে নিয়োগ করা প্রবীণ আইনজীবী আকরামুজ্জামান এভাবেই যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এইদিন আকরামুজ্জামানের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়নি।
আদালতে আকরামুজ্জামান বলেন, এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন বিচারিক হাকিম আদালতে স্বেচ্ছায়, সত্য ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এটি যারা স্বীকারোক্তি দেয়নি-তাদের ওপরও বর্তায়। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অন্য সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় সাক্ষ্য প্রদানের ভিত্তিতে অপর চারজনকেও আসামি হিসেবে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়েছে। সবাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন।
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, আদালতে আসামিরা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার আগে বিচারিক হাকিম তাদের (আসামি) স্বীকারোক্তিমূলক জবানন্দি দিলে বা দোষ স্বীকার করলে বিচারে শাস্তি হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন। আসামিদের চিন্তা করার জন্য ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, আসামিরা সবাই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতো। কেউ নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নেয়, কেউ হাত-পা বাঁধে, কেউ চেপে ধরে, কেউ কেরোসিন ঢালে, কেউ আগুন দেয়, কেউ বা সাইক্লোন শেল্টারের নিচে, কেউ মাদ্রাসার গেইটে পাহারা দেয়। কেউ প্রত্যক্ষভাবে আবার কেউ বাইরে থেকে মদদ দিয়ে সাহায্য করে। একই ঘটনায় তারা সবাই দোষী।
এছাড়া বোরকাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। নুসরাতকে কেরোসিন দিয়ে পোড়ানোর বিষয়টি প্রমাণিত বলেও যোগ করেন এ আইনজীবী।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।
পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যায়।
এরপর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নামোল্লেখ করে সোনাগাজী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলাটি ১০ এপ্রিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়।
এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম তদন্ত শেষে ২৯ মে ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ৫ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোপত্রভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্ত করা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাসহ ১২জন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
এসএইচডি/ওএইচ/