এ বিষয়ে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে এমন মত প্রকাশ করেছে ফায়ার সার্ভিস। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পুলিশের প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
এসব প্রতিবেদন দখিলের পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ ২২ জুন পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনতাসির আহমেদ ও রিটকারী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
পরে অমিত তালুকদার বলেন, পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলছে, করোনার জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করতে তাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।
নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব বলেন, প্রতিবেদন দাখিলের পর ইউনাইটেডের পক্ষে রুল শুনানির আর্জি জানানো হয়। যেহেতু অবহেলার অভিযোগে মামলাও হয়েছে, সেটার তদন্তও চেয়েছেন তারা। এরপর হাইকোর্ট ২২ জুন দিন ধার্য করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনা চলাকালে আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরতরা চার টনি শীতাতপ যন্ত্র থেকে ধোয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে অগ্নিনির্বাপনের চেষ্টা, ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপন দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ জানালে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো বলে মত প্রকাশ করেন তদন্ত দলের সদস্যরা। ওই এসি থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরতদের (ডাক্তার, তিনজন নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী) আগুন নেভাতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য অগ্নিনির্বাপনী সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি বলেও প্রতীয়মান হয়। ফলে আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের গাফিলতিতেই ঘটনাটি ঘটে বলে মনে করে তদন্ত কমিটি।
গত ৩০ মে রিট আবেদনটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। ১ জুন আরও একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রানজীব ও ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। পরে গত ২ জুন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৪ জুনের মধ্যে পৃথক প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
গত ২৮ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ারের পাঠানো বার্তায় নিহত পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা হলেন- রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরুন অ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহবুব (৫০)।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৮ মে বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মূল ভবনের বাইরে হাসপাতাল সংলগ্ন করোনা আইসোলেশন ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে ভর্তি পাঁচজন রোগীকে বাইরে বের করা সম্ভব হয়নি। তারা ভেতরেই মারা যান। আইসোলেশন ইউনিটের পাঁচজনই জনই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।
এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপমৃত্যুর মামলা করলেও আগুনে নিহত ভেরুন এন্থনি পলের পরিবার ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করেন।
মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
ইএস/এনটি