রোববার (১৪ জুন) ঢাকা মহানগরীর তিনটি থানায় হওয়া পৃথক তিনটি মামলাতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের তিনজন বিচারকের কাছ থেকে একই সিদ্ধান্ত আসে। সংশ্লিষ্ট তিনজন বিচারকই জামিন আবেদন আদালতের নথিভূক্ত রাখার আদেশ দেন বলে জানা যায়।
ফটো সাংবাদিক কাজলের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীতে হওয়া তিনটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে বিচারক জামিন আবেদনের শুনানি করেননি।
তিনি আরও বলেন, যশোরে যখন ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছিল পুলিশ, তখন ঢাকায় তার নামে তিনটি মামলা রয়েছে বলে কারণ দর্শায়। অথচ প্রায় দেড় মাসেও তাকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তার জামিনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা ছাড়া এর কোনো কারণ দেখছি না ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কাজলের নামে শেরে বাংলানগর, কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা হয়। তিনটি মামলাতেই তার পক্ষে ইমেইলের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল জামিন আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে কামরাঙ্গীরচর থানায় হওয়া মামলার শুনানি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমানের আদালতে ছিল। এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার দেখানোর কোনো আবেদন করেননি। তাই ভার্চ্যুয়াল আদালত জামিন আবেদনও শুনানি করেননি।
অপরদিকে শেরে বাংলানগর থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন অনিষ্পন্ন থাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিমের ভার্চ্যুয়াল আদালত তার জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেননি। গ্রেফতার দেখানোর আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় হাজারীবাগ থানায় হওয়া মামলায় জামিন শুনানিও গ্রহণ করেননি অপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর ভার্চ্যুয়াল আদালত।
এদিকে সিএমএম আদালতে হাজারীবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশ্রাব আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আসামিপক্ষের আইনজীবীকে আগেই বলেছিলাম, শ্যোন অ্যারেস্ট না দেখানো পর্যন্ত আপনি জামিন চাইতে পারেন না। তবে আবেদন করতে পারেন, কিন্তু শ্যোন অ্যারেস্ট না দেখানো পর্যন্ত আবেদন শুনানি করার সুযোগ আইনে নেই। হাজারীবাগের মামলায় কবে নাগাদ কাজলকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন শুনানি হতে পারে তাও জানাতে পারেননি পুলিশের এই উপ-পরিদর্শক।
এর আগে ঢাকা থেকে নিখোঁজের ৫৩ দিন পর গত ২ মে রাতে যশোরের বেনাপোলের ভারতীয় সীমান্ত সাদিপুর থেকে অনুপ্রবেশের দায়ে ফটো সাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক করে বিজিবি। পরদিন (০৩ মে) অনুপ্রবেশের দায়ে বিজিবির দায়ের করা মামলায় আদালতে সাংবাদিক কাজলের জামিন মঞ্জুর হলেও পরবর্তীতে কোতোয়ালি মডেল থানায় ৫৪ ধারায় অপর একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত ৯, ১০ ও ১১ মার্চ রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে শেরে বাংলানগর থানায় প্রথম মামলাটি করেছিলেন মাগুরা-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর।
এর পরদিন ১০ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরপুলের ‘পক্ষকাল’ অফিস থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হন। ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন। গত ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শফিকুল ইসলাম কাজলকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেওয়ার দাবি জানায় তার পরিবার। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
কেআই/এমআরএ