ঢাকা: চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর অভিযোগ তদন্তে ঢাকায় ২টি মনিটরিং টিম এবং সারাদেশে বিভাগীয় এবং জেলায় ৪ সদস্যের মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (২২ জুলাই) এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে ৬ জুলাই এক আদেশে আদালত চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর অভিযোগ তদন্ত করে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মহানগরের জন্য ২টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল দুটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন টিম পরিদর্শন করে এবং ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনো প্রতিবেদন দাখিল করেনি। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, সব অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত পূর্বক অতিদ্রুত তারা প্রতিবেদন দাখিল করবে।
বেসরকারি পর্যায়ে ঢাকা ট্রমা হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে পরিদর্শন পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্রোগ নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের জন্য এবং জেলার জন্য যথাক্রমে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং সিভিল সার্জনদের সভাপতি করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। যাদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ সমূহ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
টেলিফোন করে জানা যায় - নির্দেশনা মোতাবেক তারা তদন্ত কাজ শুরু করলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় এখনো কোন প্রতিবেদন প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত কাজ শেষ করে অবিলম্বে প্রতিবেদন অধিদপ্তর বরাবর দাখিল করা হবে মর্মে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা যাতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ সহজেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানাতে পারে সেজন্য অভিযোগ গ্রহনের সুবিধার্থে একটি ই-মেইল খুলে তা প্রচার করা হয়েছে। হলো—(covid19complain@mis.dghs.gov.bd)
এছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা ও রিফিলিং এর খুচরা মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
জটিল রোগে আক্রান্তদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যান্সার, কিডনি ডায়লাইসিস সহ জটিল রোগে আক্রন্ত সকল রোগীর ফলোআপ চিকিৎসার প্রয়োজনে করোনা পরীক্ষা অত্যাবশ্যক বিধায় সে সমস্ত রোগীদের করোনা পরীক্ষা অগ্রাধিকার ডিত্তিতে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এবং বাংলাদেশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ও নার্স অ্যাসোসিয়েশন বরাবর পত্র পাঠানো হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পরে তুষার কান্তি রায় বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৬ আগস্ট দিন রেখেছেন।
জামিউল হক ফয়সাল বলেন, এ বিষয়ে ফের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসায় অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ, আইসিইউ বণ্টন, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে কয়েকটি রিট মামলা করা হয়।
এসব রিট আবেদনে গত ১৫ জুন হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা ও অভিমতের মধ্যে ১৬ জুন ৭টি নির্দেশনা স্থগিত করেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। ৩টি নির্দেশনা বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে ৩০ জুনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগীর কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রি-ফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করার ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে (ভান্ডার ও সরবরাহ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় রোগী ভর্তি না করায় এবং অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগামের চারটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে পৃথক একটি রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনে হাসপাতালে ভর্তি না করার কারণে যেসব রোগী মারা যাচ্ছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, করোনা সংক্রান্ত রোগী ভর্তি না করার বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য পুলিশের একটি পৃথক হটলাইন চালুর বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সে আবেদনের পর ৬ জুলাই বিনা চিকিৎসায় রোগী ফেরতের ঘটনায় দায়েরে কৃত রিটের অভিযোগগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ২১ জুলাইয়ে মধ্য হাইকোর্টে দাখিল, (ক্যান্সার সহ জটিল রোগের আক্রান্ত রোগীদের কোভিড থাকলে ৩৬/৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টেস্ট করে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা, ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অক্সিজেনের মূল্য নির্ধারণ, বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অথবা চিকিৎসার অস্বাভাবিক মূল্য রাখলে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা এবং বিনা চিকিৎসার জন্য অভিযোগ দায়েরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনলাইনে অভিযোগ গ্রহণের পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ দেন।
এ আদেশ অনুসারে বুধবার আদালতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২০
ইএস/এমজেএফ