ঢাকা: স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালত নিয়মিতভাবে চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতিকে ৮ জুলাই অনুরোধ জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। ওই প্রস্তবানার আলোকে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সুচিন্তিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সোমবার (২৭ জুলাই) ফের দাবি জানায় সুপ্রিম কোর্ট বার।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টর রুহুল কুদ্দুস কাজল সোমবার প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি পত্র দেন।
ওই পত্রে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি গত ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ৭টি প্রস্তাবনা আপনাকে (প্রধান বিচারপতি) অবগত করা হয়।
গত ২৬ জুলাই কার্যকরী কমিটির সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিগত সভার ৭টি প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে কার্যকরী কমিটি পুনরায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিনীত অনুরোধ জানানোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়।
‘নিয়মিত আদালত চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের সুনির্দিষ্ট অভিমত জানানো হলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অদ্যাবধি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা, সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। নিয়মিত আদালত চালুর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়ে আমরা যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম, তা বিবেচনাযোগ্য কিনা তা আমরা জানতে পারিনি। ’
‘অস্থায়ী ভিত্তিতে চালু থাকা ভার্চ্যুয়াল আদালতে সময়ের সীমাবদ্ধতা, মামলা দায়ের, লিস্টে আনা এবং আদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনজীবীরা যেসব প্রক্রিয়াগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তার কোনো দৃশ্যমান সমাধান আমরা পাইনি। ’
এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির ৮ জুলাইয়ের প্রস্তাবনার আলোকে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর বিষয়ে পুনরায় আপনার সুচিন্তিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে ৮ জুলাই প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠানো ওই পত্রে বলা হয়, গত ১২ই মার্চ থেকে অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত ছুটি এবং ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতেও ইতোমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, কলকারখানা, মার্কেট ও গণপরিবহন চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে, একদিকে যেমন আইনজীবীরা যথাযথভাবে তাদের পেশা পরিচালনা করতে পারছেন না ও আর্থিক সংকটে পতিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ওই পত্রে আরও বলা হয়, একথা অনস্বীকার্য যে, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণেই ভার্চ্যুয়াল আদালতের সৃষ্টি।
তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ আইনজীবী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ভার্চ্যুয়াল আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এছাড়া ভার্চ্যুয়াল আদালতে আগাম জামিনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ব্যাপক পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির করণীয় বিষয়ে কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভা বুধবার ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কার্যকরী কমিটির সদস্যরা বিদ্যমান পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে নিয়মিত আদালত চালুর ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়।
সিদ্ধান্তুগলো হলো- ভার্চ্যুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি অতিমত প্রকাশ করে।
যেহেতু করোনার ভয়াবহতার কারণে ইতোমধ্যে আদালতের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিতভাবে নষ্ট হয়েছে, সুতরাং এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডোর অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক ছুটি এবং সব আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করতে হবে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে আদালতের ঐচ্ছিক ছুটিও কমিয়ে আনতে হবে।
নিয়মিত আদালত চালুর আগে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা ও নীতিমালা প্রণয়ন, বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত নিয়মিত আদালত চালু করা সম্ভব হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত আইনজীবীরা যেন পেশা পরিচালনার সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভার্চ্যুয়াল কোর্টের সংখ্যা, পরিধি এবং বিচারিক সময়সীমা বাড়াতে হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ভার্চ্যুয়াল আদালতেও আগাম জামিন চালু করতে হবে।
বালাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২০
ইএস/এএ