ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

'পদ্মা ব্যাংকের ঋণ পেতে ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ দেন সাহেদ'

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
'পদ্মা ব্যাংকের ঋণ পেতে ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ দেন সাহেদ' ফাইল ছবি

ঢাকা: পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) থেকে দুই কোটি টাকা ঋণ নিতে ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে।  

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী/অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতির সঙ্গে তার অনৈতিক লেনদেন হয় বলেও অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

এ বিষয়ে হওয়া মামলার রিমান্ড শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল আদালতে এসব অভিযোগ করেন।  

রিমান্ড শুনানি শেষে সোমবার (১০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ সাহেদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিন দুপুর ১২টার একটু পর রিমান্ড শুনানির জন্য সাহেদকে আদালতে হাজির করা হয়। সোয়া ১২টার দিকে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে বিচারক সাহেদের কাছে জানতে চান, তার আইনজীবী আছে কি না। এ সময় সাহেদ আদালতকে জানান, তার কোনো আইনজীবী নেই। তখন বিচারক বলেন, আপনি আইনজীবী নিতে পারেন, তাই আপনাকে একটু সময় দিচ্ছি।

এরপর কিছুটা বিরতি দিয়ে রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। তখন সাহেদ কোনো আইনজীবী না নিয়ে নিজেই রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আমি ২০ দিনের রিমান্ড শেষ করে এসেছি। আরো ২৭ দিনের রিমান্ড বাকি আছে। আমি খুবই অসুস্থ, আমার শরীর কতটা খারাপ, বলে বোঝাতে পারব না। এখন আপনি বিবেচনা করবেন।

এরপর দুদকের পক্ষে মোশারফ হোসেন কাজল রিমান্ড শুনানিতে বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালে এমআরআই মেশিন কেনার কথা বলে সাহেদ পদ্মা ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা ঋণ নেন। অথচ তিনি মেশিন কেনেননি। এমনকি তিনি মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট কেনার কোনো প্রমাণ দাখিল করেননি। আমরা জানতে পেরেছি, এ ঋণ পেতে তিনি ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন এবং ঋণের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কি অনিয়ম করেছেন এবং এর সঙ্গে আর কারা জড়িত, তা জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করছি।

এ সময় সাহেদ বলেন, এ ব্যাংকে আমার ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ছিল। তার বিপরীতে আমি ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ নিই। এটি চলমান লেনদেন ছিল। এখানে কোনো অনৈতিক কিছু ঘটেনি।

তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, পদ্মা ব্যাংকে তার কোনো এফডিআর ছিল না। সেটা অন্য ব্যাংকে ছিল। এসময় সাহেদ বিরোধিতা করলে আদালতে দুদকের আইনজীবীর সঙ্গে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর বিচারক তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের রিমান্ডের আদেশের পরও সাহেদ তার পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে থাকেন। তবে বিচারক তার আবেদনে সাড়া দেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এর আগে গত ৬ আগস্ট সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রিমান্ড শুনানির জন্য ১০ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছিল।

গত ২৭ জুলাই মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।  

মামলার অন্য আসামিরা হলেন-রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিল, পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী/অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ও তার ছেলে বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক চিশতি৷

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে ঋণের নামে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, গুলশান করপোরেট শাখার এক কোটি টাকা (যা সুদা-আসলসহ ১৫/৭/২০২০ তারিখের স্থিতি ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা) আত্মসাৎ করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২০
কেআই/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।