ঢাকা: বেশ কয়েক বছর ধরেই ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন বাতিল’ চাওয়া হচ্ছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। এরমধ্যেই আইনটি পাস হওয়ার সাত বছর পর বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ আইনে প্রথম রায় হতে যাচ্ছে।
রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচজন এ মামলার আসামি।
তারা হলেন- পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এবং পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদ। আসামিদের মধ্যে এসআই জাহিদ ও সুমন কারাগারে থাকলেও বাকিরা জামিনে আছেন।
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৪ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ মামলার আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মামলার যক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঝপথে যুক্তিতর্ক বন্ধ হয়ে যায়। আগস্ট মাসে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে গত ২৪ আগস্ট এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
এ মামলায় আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে বলে আশা রাষ্ট্রপক্ষের।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রাষ্ট্রপক্ষে এ আসামিদের বিরুদ্ধে যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছি। আশা করছি, আসামিদের আইনে থাকা সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই হবে।
অপরদিকে এ মামলার আসামিপক্ষে আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, আসামিরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপালন করছিলেন। জনি হৃদরোগে মারা গেছেন বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে। এখানে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশা করছি, আসামিরা এ মামলায় খালাস পাবেন।
মামলার আর্জি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এসময় নিহত জনি ও তার ভাই সুমনকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে সে পুলিশকে ফোন দেয়। পরে পুলিশ এসে জনিকে আটক করে। এসময় স্থানীয়রা পুলিশকে ধাওয়া দিলে তারা গুলি ছুড়ে।
আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের এক পর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হয়। এসময় তাকে প্রথমে ন্যাশনাল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জনির মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ হোসেন তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওসি জিয়াউর রহমানসহ পাঁচজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে প্রতিবেদনে নতুনভাবে অভিযুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। অভিযোগ গঠনের পর প্রায় সাড়ে চার বছরে এ মামলার বিচার কাজ শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
কেআই/আরবি/