বরগুনা: বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে তার মনোনীত আইনজীবীর জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। রায়ের জন্য ধার্য করা দিন অর্থাৎ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিন্নি থাকবেন তার আইনজীবীর জিম্মায়।
জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মিন্নিকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার জন্য বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আদালতে জামিন আবেদন করেন তার মনোনীত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম। এরপর জামিন শুনানি শেষে এ আবেদন মঞ্জুর করে মিন্নিকে ওই আইনজীবীর জিম্মায় দেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
এর আগে বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য উপস্থাপিত যুক্তি খণ্ডনের দিন ধার্য থাকায় সকাল ৯টার দিকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের সঙ্গে আদালতে আসেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এছাড়াও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয় এ মামলায় কারাগারে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকেও।
এরপর বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির পক্ষে উপস্থাপিত যুক্তি খণ্ড শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। যুক্তি খণ্ডন শেষে উচ্চ আদালতের দেওয়া মিন্নির জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে নিজের জিম্মায় জামিনে রাখতে তার পক্ষে আদালতে আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম।
এরপর এ আবেদন মঞ্জুর করে আদালত রায়ের আগ পর্যন্ত মিন্নিকে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামের জিম্মায় দেন। । একই সঙ্গে ১০ আসামির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।
এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ আদালতের দেওয়া মিন্নির জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর মিন্নিকে আমার জিম্মায় জামিনে মুক্ত রাখার জন্য আবেদন করি। পরে আদালত এ আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের আগ পর্যন্ত মিন্নিকে আমার জিম্মায় জামিন দেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হবে।
গত বছরের ২৬ জুন রিফাতকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।
হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর গতবছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
পরে গত বছরের ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে আদালত মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে গত বছরের ২০ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিন একই আদালতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
এরপর ৪৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার শর্তে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বরগুনার কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন মিন্নি। জামিনের পর থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় বাড়িতে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
এসআই