নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মেধাবী এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার ৮ বছর পর ধর্ষক নাঈম হাসানকে (২৮) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দীন চাঞ্চল্যকর এই স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার রায় দেন।
রায়ে অপহরণ ও নারী ও শিশু নির্যাতন উভয় অভিযোগে পৃথকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ আসামিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার দুই লাখ আদায় করে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর পরিবারকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের সময় আদালতে ধর্ষণকারী নাঈম অনুপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডিত নাঈম আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দী গ্রামে আব্দুর রউফ মিয়ার ছেলে ও ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লাক মিয়ার ভাতিজা।
আদালতের রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিবউদ্দিন।
মামলার বরাত দিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুস সেলিম ও অ্যাড. মাসুদ রানা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা-২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলায় পঞ্চম স্থান অর্জনকারী ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রীকে ২০১২ সালে ৭ এপ্রিল সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেন ধর্ষক নাঈম। অপহরণের পর রূপগঞ্জের পারাগাঁও এলাকায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে যায়। পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে রেখে চিকিৎসা দেয়।
পরে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে অপহরণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আড়াইহাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে মেয়েটির পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়াসহ যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদেরকে গোপনে শুরু করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।
এছাড়াও জামিনে প্রতারণার আশ্রয়সহ বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম ফের স্থগিতের আবেদন করলে গত সপ্তাহে চেম্বার জজ তা খারিজ করে দেয়। পূর্ব-নির্ধারিত তারিখ বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার রায় দেন আদালত।
তারা জানান, দীর্ঘসময়ে পরে হলেও আদালতের রায়ে দোষীদের চিহ্নিত করে সাজা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট।
মামলার বাদী জানান, ধর্ষণকারী ও তার পরিবার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনার পর গত ৮ বছর তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হয়রানি সহ্য করতে হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এরপরও তিনি মনে করেন, সবার সহযোগিতায় আদালতের এই রায় পেয়েছেন, যাতে অপরাধীর সাজা হয়েছে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার সময় নির্যাতিত স্কুলছাত্রী ৭ম শ্রেণিতে পড়তেন। এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। দীর্ঘসময়ে পরে এসে আলোচিত এ ঘটনায় আদালতের রায়ে নির্যাতিত সেই ছাত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্তের আইনজীবীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
এএটি