ঢাকা: রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার একমাত্র আসামি মজনু আদালত চত্বরে কান্নাকাটি করেছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ও মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পুরাতন জেলা জজ আদালত ভবনের ছয়তলায় সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় কান্নাকাটি করতে থাকেন মজনু।
এই মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে জানা যায়, আদালত চলাকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও কাঁদতে থাকেন মজনু।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এক পর্যায়ে কাঠগড়ায় থাকা মজনু জোরে জোরে কথা বলতে থাকেন। তাকে সামাল দিতে বেগ পেতে হয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের। পরে বিচারকের কাছে খাবার চাইতে থাকেন। বলেন, ‘গত রাত থেকে খাইনি। আমার জন্য খাবার কিনে আনেন। আমি কারাগারে যাব না, মায়ের কাছে যাব। ’ এছাড়াও তিনি দোষী নন বলে চিৎকার করে বলতে থাকেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় এক পর্যায়ে মজনু কাঠগড়ায়ই শুয়ে পড়েন।
এরপর দুপুরের দিকে যখন তাকে এজলাস থেকে বের করে নেওয়া হয় তখনো কাঁদতে থাকেন মজনু। তবে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এসব কান্নকাটি তার অভিনয়। কান্নাকাটি করে সে অনুকম্পা পেতে চাইছে। তার এই কান্নায় বিচারে কোনো প্রভাব পড়বে না।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২১ জন সাক্ষী রয়েছেন। বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো। সোমবারও এই মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।
চলতি বছর ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুর্মিটোলা স্টপে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে রাত ১২টার পর তাকে ঢামেক জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন।
এই মামলায় গ্রেফতার মজনু গত ১৬ জানুয়ারি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানববন্দিতে তিনি একাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানান।
গত ১৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক মজনুকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মজনুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর পোশাক ও মোবাইল ফোনসহ ২০টি আলামত জমা দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্রের সঙ্গে।
একমাত্র আসামি গ্রেফতার থাকায় মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় অভিযোগপত্র দাখিলের দিনই তা সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি। এরপর গত ২৬ আগস্ট এই মামলার একমাত্র আসামি মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
কেআই/এমজেএফ