ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যাবজ্জীবনের রায় বদলে ৭ বছর বানিয়ে আপিল!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
যাবজ্জীবনের রায় বদলে ৭ বছর বানিয়ে আপিল!

ঢাকা: মেয়েকে ধর্ষণ করার অভিযোগে তার বাবা ২০১২ সালে মামলা করেছিলেন আসামি কবির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এ মামলায় ২০১৫ সালে ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল একমাত্র আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।


 
কিন্তু আসামিপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বদল করে হাইকোর্টে আপিল করেন। যেখানে বলা হয়েছে, তার সাজা হয়েছে মাত্র ৭ বছর। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এ আপিলের পর বিষয়টি ধরা পড়ে। তাই রোববার উচ্চ আদালত ওই আসামি, দুই কারারক্ষী, দুই তদবিরকারক ও হলফকারকের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন।   
 
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে এ নির্দেশ দেন।
 
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামিপক্ষে ছিলেন শেখ আতিয়ার রহমান।
 
কবির বিশ্বাস ছাড়া বাকিরা হলেন, কনস্টেবল (কারারক্ষী) বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল (কারারক্ষী) খায়রুল আলম, তদবিরকারক চাঁন্দ আলী বিশ্বাস (বাবা মৃত বজলু বিশ্বাস, গ্রাম উত্তরপাড়া, ঝিনাইদহ) ও ওকালতনামা দেওয়া কাদের আলী (বাবা ইয়াকুব আলী)।
 
আইনজীবীরা জানান, মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর কবির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায় মামলা করেন। বিচার শেষে ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৮ জুলাই রায় দেন। রায়ে একমাত্র আসামি কবির বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। এই রায় ঘোষণার সময় আসামির বয়স ছিল ৩২ বছর।
 
ওই রায়ের পর কারাবন্দি কবির বিশ্বাস হাইকোর্টে আপিল করেন। আদালত তার আপিল গ্রহণ করেন, যেটি এখন বিচারাধীন।
 
এদিকে কারাবন্দি কবির হোসেনের পক্ষে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নতুন করে আপিল করেন। যেটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিলটি গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য ওঠে।
 
এতে আইনজীবী হিসেবে আপিলটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান।
 
এই আপিলের সঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ে যে অনুলিপি দাখিল করা হয় তাতে দেখা যায়, ঝিনাইদহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আবু আহসান হাবীব ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এক রায়ে কবির বিশ্বাসকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং আরো তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।  

রায়ে বলা হয়েছে, কবির বিশ্বাসের বয়স ৬৫ বছর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বয়স বিবেচনায় তার সাজা কমিয়ে ৭ বছর দেওয়া হলো। এই আপিলের পর আদালত গত ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তবে আসামির সাজা কেন বাড়ানো হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণের পরও কেন সাজা কম দেওয়া হয়েছে তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে বিচারক আবু আহসান হাবীবকে নির্দেশ দেন।  
 
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ওই আদেশের সময় আদালতের প্রশ্ন ছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণের পর আসামিকে যাবজ্জীবন সাজা না দিয়ে সাজা কম দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা। জবাবে বলেছিলাম, সে সুযোগ নেই। আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে খালাস দিতে হবে। এর বাইরে কিছু করার নেই বিচারকের।
 
এরপর মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ওই মামলার সব নথি জোগাড় করে জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।
 
এরপর রোববার আদালত আদেশ দেন। আদেশে পাঁচজনের বিষয়ে মামলার পাশাপাশি আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানকে মামলার তদন্তে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও মামলার তদন্তে যদি অন্য কারো সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় তবে তাকেও আসামি করা যাবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জাল নথির ভিত্তিতে দেওয়া গত ১৫ সেপ্টেম্বরের আদেশও প্রত্যাহার করেছেন আদালত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।