নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. আয়নাল হক হত্যা মামলায় দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে উভয়কে ১০ হাজার এক টাকা করে ২০ হাজার দুই টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় মামলাটি থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন ১১ জন। আর চারজন মৃত্যুবরণ করায় তাদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এর আগে বেলা ১১টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন হলেন- বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষভাঙ্গা গ্রামের বাহার উদ্দিন মোল্লার ছেলে মো. তোরাব আলী ও পলান মোল্লার ছেলে মো. শামীম। মামলার ১৭ জন আসামির মধ্যে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ১০ জন। মামলার অন্য সাত আসামির মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এক নম্বর আসামিসহ চারজন এবং পলাতক রয়েছেন তিনজন।
নাটোর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২০০২ সালের ২৮ মার্চ বনপাড়া হীরামণ সিনেমা হলের কাছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু আলম মোল্লাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনার পর পরই ওই রাতেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আয়নাল হকের বনপাড়া বাজারে মহিষভাঙ্গা রোডের বাসায় হামলা চালায়। সেই সময় তারা ডা. আয়নালকে রাস্তায় নিয়ে এসে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যান। এ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ মার্চ সকালে তার মৃত্যু হয়। ওই রাতে আয়নাল হকের গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং লুটপাট চালানো হয়।
এ ঘটনায় ডা. আয়নালের পুত্রবধূ ও বর্তমান বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কেএম জাকির হোসেনের স্ত্রী নাজমা জাকির বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল আলমসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ১৭ জনকেই আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। ওই মামলায় সোমবার এ রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন তিনি নিজেই (অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম) আর আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক মন্টু।
এদিকে বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, ডা. আয়নাল হক হত্যার আগে ওইদিন সন্ধ্যার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু আলম মোল্লাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনার জের ধরেই আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আয়নালকে হত্যা করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তবে এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং বর্তমানে বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কেএম জাকিরকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। নিহতের বড় ভাই মাঝগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান শাহের উদ্দিন মোল্লা ছিলেন ওই মামলার বাদী। শাহের উদ্দিন মোল্লা ২০০৪ সালে মারা গেলে তার ভাই সোহরাব মোল্লা বাদী হন।
মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ ১৭ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বাদীপক্ষ নারাজি দেওয়ার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। সিআইডিও ১৭ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। আবারও বাদীপক্ষ নারাজি দেওয়ায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করে ১৯ জনকেই আসামি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০
এসআরএস