ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীর এক নিকটাত্মীয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রীর এক নিকটাত্মীয় আজ সাক্ষ্য দিয়েছেন, যিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ডের বাংলা বিভাগে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট হিসেবে কর্মরত। ওই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার পর তার এই নিকটাত্মীয় সাংবাদিককে ফোন দেন। তিনি পরবর্তীসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিমানবন্দর থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান এবং পরবর্তী দু’তিনদিন তার পাশে ছিলেন।
গত ২৬ আগস্ট এই মামলার একমাত্র আসামি মজনুর বিচার শুরু হয়েছে। ওইদির তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবার সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরদিন ভুক্তভোগী ছাত্রী ধর্ষক হিসেবে মজনুকে শনাক্ত করেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর দুই বান্ধবী সাক্ষ্য দেন। তাই রাষ্ট্রপক্ষের ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।
সাক্ষীদের উপস্থিতির নিশ্চয়তা সাপেক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করা হবে বলেও জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ)।
গত ১৬ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক অভিযোগত্র দাখিল করেন। মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ওইদিনই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসি বিচারের জন্য তা সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।
এরপর গত ১৬ আগস্ট একই আদালত এই মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে চার্জ গঠনের জন্য ২৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
অভিযোগপত্রে মজনুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। আর রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয়েছে ১৬ জনকে। ভুক্তভোগীর পোশাক ও মোবাইল ফোনসহ ২০টি আলামত জমা দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্রের সঙ্গে।
এই মামলায় গ্রেফতার মজনু গত ১৬ জানুয়ারি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানববন্দিতে তিনি একাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানান।
গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুর্মিটোলা বাস স্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর ওই ছাত্রীকে মুখ চেপে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যান অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে রাত ১২টার পর তাকে ঢামেক জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফেরেন।
এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ঢাবি উত্তাল হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা ঘটনার পরদিন শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অপরাধীকে গ্রেফতারের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ডাকসু, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০
কেআই/এএ