সিলেট: সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে গণধর্ষণের মামলায় আরও তিন আসামিকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন, মামলার ৩নং আসামি মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), মামলার সন্দিগ্ধ আসামি রাজন ও তার সহযোগী আইনুল।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আমলি আদালতে তাদের হাজির করে সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ (র.) থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সাইদুর রহমান পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ দিন আসামি মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন ও তার সহযোগী আইনুলের সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হলে পাঁচদিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
আদালত থেকে বেরিয়ে সিলেট জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রিমান্ড মঞ্জুরকালে জেলা বারের শতাধিক আইনজীবী বাদী পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।
তারা আদালতকে বলেন, ধর্ষণকারীরা এমসি কলেজের ১২৮ বছরের ইতিহাস কলঙ্কিত করেছে। তাদের সাতদিনের রিমান্ড দিলে নেপথ্যের প্রশ্রয়দাতাদের নাম বেরিয়ে আসবে। সে সময় আদালতের বিচারক দুই লাইনে আসামিদের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা কোনো কিছু বলতে পারেনি।
এসময় আরেক আইনজীবী বলেন, রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরাই মেয়েটিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এটা আদালতকে জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মামলার আরও তিন আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। তারা হলেন- প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও ৪নং আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫নং আসামি রবিউল ইসলাম। ওইদিন তাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট দ্বিতীয় আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক সাইফুর রহমান পাঁচদিন মঞ্জুর করেন।
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আজও রনি, রাজন ও আইনুলকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এ নিয়ে মামলায় গ্রেফতার করা সাত আসামির ছয়জনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আসামিদের কোর্টে হাজিরের আগে আদালত পাড়ায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। দুপুর ১২টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার নারীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকারে করে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। এমসি কলেজ ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকতেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রণজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী।
এ ঘটনায় শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও দুই তিনজনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন ওই নারীর স্বামী।
এছাড়া ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরাণ (র.) থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০
এনইউ/টিএ