সিলেট: সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীর সামনে তরুণী গণধর্ষণের মামলার আরও তিন আসামি আদালতে দায় স্বীকার করেছেন। তারা হলেন-মামলার এজাহারনামীয় তিন নম্বর আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, অপর দুই আসামি রাজন ও আইনুল।
শনিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে তাদের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরাণ (র.) থানার পুলিশ পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য। এরপর তিন আসামির পৃথক ৩টি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয়।
আদালত সূত্র জানায়, অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে রাজনের, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২য় আদালতে আইনুলকে হাজির করা হলে বিচারক সাইফুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩য় আদালতে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনিকে হাজির করা হলে বিচারক শারমিন খানম নীলা তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলার এই তিন আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বেচ্ছায় গণধর্ষণের ঘটনায় নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। আদালতের বিচারক জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার বাংলানিউজকে বলেন, গত মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তাদের ৩ জনকে ৫দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে সৌপর্দ করা হলে ৩ জনেই জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের মামলায় ৮ আসামির ৬ জনই নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর আগে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম গণধর্ষণের নিজেদের জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এছাড়া শনিবার দুপুরে গণধর্ষণ মামলার এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮) ও ৬ নম্আবর সামি মাহফুজুর রহমান মাছুমের (২৫) ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটক রেখে নারীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকারযোগে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড়কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী।
এ ঘটনায় শনিবার ভোরে ছয়জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরাণ থানায় এ মামলা (২১(৯)২০২০) দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী। মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন-সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক আহমদ (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম (২৫)। এছাড়া ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আলাদা আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরাণ (র.) থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা (নম্বর-২২(৯)২০২০) দায়ের করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২০
এনইউ/এএটি