ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আদালত বর্জন করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
বুধবার (২১ অক্টোবর) ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্র জানায়, বুধবার বেলা ১২টার পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে শেরে বাংলা হলের সিনিয়র সুপারভাইজার মতিউর রহমানকে জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। যিনি মঙ্গলবারও (২০ অক্টোবর) জবানবন্দি দিয়েছেন।
এরপর চকবাজার থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোলাম মোস্তফা জবানবন্দি দেন। এরমধ্যে দুপুরে একঘণ্টা বিরতি দিয়ে গোলাম মোস্তফার সাক্ষ্য শেষ হয় বিকেল ৫টার দিকে।
এ সময় আসামিপক্ষে আমিনুল গণী টিটোসহ কয়েকজন আইনজীবী আজকের মতো কার্যক্রম মূলতবি রাখার আর্জি জানান। তারা বলেন, আমরা ক্লান্ত। আদালতে কক্ষেও অনেক গরম, তাই অস্বস্তিবোধ করছি। দয়া করে আজকের মতো কার্যক্রম মুলতবি করেন। তখন বিচারক বলেন, না সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।
এ সময় ওই আইনজীবীরা বলেন, তাহলে সাক্ষী এএসআই রবিউল আলমের জবানবন্দি নেন। আমরা কাল জেরা করবো। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে রবিউল আলমের জবানবন্দি শেষ হয়। এরপর বিচারক আইনজীবীদের জেরা শুরু করতে বলেন।
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আজ থাক আমরা কাল জেরা করবো। তখন বিচারক বলেন, না আজই শেষ করেন। তখন ওই আইনজীবীরা বলেন, তাহলে আপনি করেন, আমরা চলে যাই। একথা বলে ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্নার আইনজীবী ব্যতিত অন্যান্য আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন।
এরপর মুন্নার আইনজীবী রবিউল আলমকে জেরা শেষ করেন। তখন বিচারক মুন্না ব্যতিত কাঠগড়ায় থাকা অপর ২১ আসামির কাছে জানতে চান, তারা সাক্ষীকে জেরা করবেন কি না? তখন তারা সাক্ষীকে জেরা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর আদালত তার সাক্ষ্য সমাপ্ত বলে ঘোষণা করেন।
এ নিয়ে মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য শেষ হলো। এরপর বৃহস্পতিবার মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
পরে আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলায় বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬/৭টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে৷ আমরা সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সাক্ষ্য নেওয়ার কথা বলেছি। আদালত আমাদের কথা গ্রহণ করেননি বলে আদালত বর্জন করেছি।
সংশ্লিষ্ট সাক্ষীকে বৃহস্পতিবার জেরা করার অনুমতি না দিলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানান এ আইনজীবী।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জশিটভূক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।
গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
কেআই/ওএইচ/