সিলেট: সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যা মামলায় বরখাস্তকৃত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে রিমান্ড শেষে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে তাকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জিয়াদুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) এই মামলায় রিমান্ডে থাকা আরেক আসামি বরখাস্তকৃত কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হবে।
তদন্ত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) টিটুর ৩ দিনের রিমান্ড শেষ হয়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল টিটুকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনই তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এই মামলায় আরেক কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এদিকে নিহত রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পিবিআই। রোববার (২৫ অক্টোবর) সকালে শেখ সাইদুর রহমান পিবিআই অফিসে গেলে এ দিন বিকেলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। তাকে ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদস্যরা। সকাল ৭টা ৫০মিনিটে হাসপাতালে মৃত্যু হয় রায়হানের।
পুলিশ পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে পরিবার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন বন্দর বাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান।
নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ান মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে। মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করেন।
মামলাটি পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম চালায়। নিহতের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনঃময়না তদন্ত করা হয়। তাতে রায়হানের দেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন মিলে ফরেনসিক রিপোর্টে। এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর পলাতক থাকলেও পুলিশ হেফাজতে থাকা কনস্টেবল টিটুকে ২০ অক্টোবর ও হারুনুর রশিদকে ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২২ অক্টোবর এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা। এছাড়া রোববার নিহত রায়হানকে ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন।
রায়হান নিহতের ঘটনায় বৃহত্তর আখালিয়া (বারো হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এলাকাবাসী বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২০
এনইউ/এএটি