ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বরখাস্ত এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
বুধবার (৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ও এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু। পরে তাদের বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ এ তিন আসামির প্রত্যেককে ভুক্তভোগী পরিবারকে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেও বলা হয়েছে।
এ মামলায় পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন বাতিল' চাওয়া হচ্ছিল পুলিশের পক্ষ থেকে।
এর মধ্যেই আইনটি পাস হওয়ার সাত বছর পর বুধবার এ আইনে প্রথম রায় হলো। এ মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৪ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলার আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঝপথে যুক্তিতর্ক বন্ধ হয়ে যায়। আগস্ট মাসে নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ২৪ আগস্ট এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করছিলেন। জনি ও তার ভাই এ সময় সুমনকে সেখান থেকে চলে যেতে বললে তিনি পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ এসে জনিকে আটক করে। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশকে ধাওয়া দিলে তারা গুলি ছোড়ে।
আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের একপর্যায়ে জনির অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় প্রথমে ন্যাশনাল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন।
জনির মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ হোসেন তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওসি জিয়াউর রহমানসহ পাঁচজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে প্রতিবেদনে নতুনভাবে অভিযুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। অভিযোগ গঠনের পর প্রায় সাড়ে চার বছরে এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২০
ইএস/এসআই