সিলেট: পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যার মূল অভিযুক্ত সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে সাতদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আবুল কাশেম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, রিমান্ড শেষে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বরখাস্ত এসআই আকবরকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরআগে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বেলা ২ টার দিকে সিলেট চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে তাকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেন। শুনানি শেষে বিচারক সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে খাসিয়াদের সহযোগিতায় বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেনকে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের হাতে তুলে দেয় ভারতীয় খাসিয়ারা। খবর পেয়ে পোশাকে-সাদা পোশাকে পুলিশ ঘটনাস্থল ডোনা সীমান্ত এলাকা পৌঁছলে জনতা তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এরপর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আকবরকে সিলেটে আনা হলে সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
অথচ কেউ আকবরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে কি না? জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ হস্তান্তর করেনি। অবশ্য আমরা পুলিশের সব কাজে জনগণের সহযোগিতা নিই। আকবরকে গ্রেফতার করতে আমাদের কিছু বন্ধু সহযোগিতা করেছেন।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের খাসিয়ারা আকবরকে আটক করেছে-এমন প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভিডিও করা হয়নি। ওই ভিডিও কে, কোথায় করেছে তা আমাদের জানা নেই। এরকম কিছু দেখিনি। তবে তাকে জেলা পুলিশের কানাইঘাট থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ’
সংবাদ সম্মেলন পরবর্তীতে রাত পৌনে ৮টার দিকে আকবরকে পিবিআই কাছে হস্তান্তর করেছে। মঙ্গলবার আকবরকে আদালতে হাজির করা হলে তার ৭ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর হয়।
গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
‘রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন’ পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পায়। এতে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্যরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। ঘটনার পর অন্য ছয়জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও আকবর পলাতক ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
এনইউ/ওএইচ/