ঢাকা: সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যা মামলায় ফার্মাসিস্টসহ দুজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

১০ দিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় দুই আসামির মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

স্বীকারোক্তি দেওয়া দুজন হলেন- ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান ও মাইন্ড এইড হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় তানিফ মোল্লা। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে মামলায় ছয়জন স্বীকারোক্তি দিলেন।

গত ১৬ নভেম্বর মাইন্ড এইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় ও ওয়ার্ডবয় সজীব চৌধুরী এবং ১৫ নভেম্বর কিচেন সেফ মাসুদ খান এবং ওয়ার্ডবয় অসীম চন্দ্র পাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।

একইদিনে ঢাকার সরকারি মানসিক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দুইদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন অপর একটি আদালত।

পরিবারের সদস্যরা জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ৯ নভেম্বর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধাস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার পর হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপাতালের ভেতরে আনিসুল করিমকে ৬ থেকে ৭ জন টেনে-হেঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে নিচে ফেলে চেপে ধরেন। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এ সময় একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যান তিনি।

ঘটনার পরদিন প্রথমে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে আরও চারজনকে আটক করা হয়। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সিসিটিভি ফুটেজে উপস্থিত ১০ জনের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়।

তারা হলেন- মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন সেফ মাসুদ, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ ও ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১ বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারে দায়িত্বে ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২০
কেআই/ওএইচ/