ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

তদন্ত কর্মকর্তার জেরায় ফাহাদের ‘ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
তদন্ত কর্মকর্তার জেরায় ফাহাদের ‘ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস’ আবরার ফাহাদ

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র প্রদানকারী তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পু‌লিশের (ডি‌বি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামানকে চতুর্থ দিনের মতো জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

এদিন জেরায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবরার ফাহাদের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা ও ভারতবিরোধী ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।

এরপর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান অবশিষ্ট জেরার জন্য বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিন রেখেছেন আদালত।

এদিন অনিক সরকারের আইনজীবী মাহবুব আহমেদ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান জামায়াত বিএনপির আমলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধর করে বের দিয়েছিল, কতজনকে বের করে দিয়েছিল সেই পরিসংখ্যান আপনি জানেন কি-না? তিনি তখন ‘না’ সূচক জবাব দেন।

এরপর তিনি জানতে চান, ঘটনার তিন-চার দিন আগে আবরার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল কি-না? তিনি বলেন, ‘না। ’

আইনজীবী মাহবুব আহমেদ এরপর জিজ্ঞাসা করেন, ঘটনার তিন-চার দিন আগে আবরার ফাহাদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ‘বর্তমান সরকার ভারতের তোষামোদি করছে। ’ আপনি কি এ বিষয়টি তদন্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘না। ’

তিনি আরও জানতে চান, আবরার ফাহাদ জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজে লাইক কমেন্ট করতো এবং সে জামায়াতের সমর্থক ছিল, বিষয়টি আপনি তদন্ত করেছেন কি-না। তিনি বলেন, ‘না। ’

এ আইনজীবী আরও জানতে চান, আবরার ফাহাদের দেহে চাপাতি বা ধারালো কোনো অস্ত্রের আঘাত পেয়েছেন কি? জবাবে তিনি বলেন, ‘না। ’ তিনি আরও বলেন, ক্রিকেট স্ট্যাম্পসহ জব্দ আলামতে শনাক্ত চিহ্ন দিয়েছেন কি না? তিনি বলেন, ‘না। ’ তখন তিনি বলেন, এসব জিনিস বাজারে সচরাচর কিনতে পাওয়া যায় কি-না? তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘হ্যা’। তখন আইনজীবী বলেন, তাহলে কেন শনাক্ত চিহ্ন দেন নাই? এ প্রশ্নে নীরব ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এরপর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আইনজীবী মাহবুব আহমেদ জানতে চান, উদ্ধারকৃত আলামত সমূহ কে, কোথা থেকে, কী উদ্দেশ্যে এনেছিল তা কি জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেছেন? জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি, তবে কেস ডকেটে উল্লেখ করেছি। ’

গত ৩১ জানুয়ারি একই আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয়। এরপর তিন কার্যদিবস জেরার পর কয়েক দফায় এ জেরার তারিখ পিছিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি অবশিষ্ট জেরার দিন ধার্য হয়।

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পু‌লিশের (ডি‌বি) লালবাগ জোনাল টিমের প‌রিদর্শক মো. ওয়া‌হিদুজ্জামান।

মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন— বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

গ্রেফতারদের ম‌ধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসা‌মি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জা‌মিন আবেদন করেন। আদালত জা‌মিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসা‌মি। তারা হলেন— মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রা‌ফিদের নাম এজাহারে ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
কেআই/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।