ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

হাইকোর্টের আদেশের পর শ্রমিক নেতা নূরুল হত্যার তদন্তে পিবিআই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
হাইকোর্টের আদেশের পর শ্রমিক নেতা নূরুল হত্যার তদন্তে পিবিআই শ্রমিক নেতা নূরুল।

রাজশাহী: হাইকোর্টের (উচ্চাদালত) নির্দেশের পর রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নূরুল হত্যা মামলার তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরইমধ্যে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় বাদীর এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগে পুঠিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দীন আহমেদের (৪৮) বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় রিটের রায় ঘোষণা হয়। এতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। আদালত প্রত্যাশা করেন যে, পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন।

এর আগে শুনানি শেষে ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এছাড়া হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও অমিত তালুকদার। দুদকের পক্ষে ছিলেন শাহীন আহমেদ।

এদিকে, নানান আইনি প্রক্রিয়া শেষে পিবিআই এর বিশেষ পুলিশ সুপার আহসান হাবিব পলাশের নেতৃত্বে একটি টিম এ তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। এরইমধ্যে পুঠিয়া শ্রমিক অফিস এলাকা পরিদর্শন করেছে ওই তদন্ত টিম। এ সময় তারা বাদীর পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম জানান, এই মামলার তদন্তে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)  পিবিআই এর একটি টিম ঢাকা থেকে পুঠিয়া যায়। এ সময় তারা হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাদীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তারা তথ্য উপাত্ত নিয়ে চলে যান।

এই মামলার বাদী নিহত নূরুলের মেয়ে নিগার সুলতানা জানান, ঢাকা থেকে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা তার কাছে গিয়ে পুরো ঘটনাটি শুনেছেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। বাবা হত্যার দ্রুত বিচার চেয়েছেন।

এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ২৪ জানুয়ারি ওসি শাকিল উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুদকের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন এ মামলা করেন। পুলিশ পরিদর্শক সাকিল উদ্দীন আহমেদ বর্তমানে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে কর্মরত।

তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। এজাহার পরিবর্তনের বিষয়টি ধরা পড়ার পর ওসি সাকিলকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নূরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি পুঠিয়া থানার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে তিনি আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সর্বোচ্চ ভোট পান। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ফল পরিবর্তন করে আববদুর রহমান পটল নামে এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে। এ নিয়ে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ তিনজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর থেকে আবদুর রহমান পটল এবং তার সহযোগীরা নুরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে নুরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটা থেকে তার মরাদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সেদিনই তার মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসিকে একটি এজাহার দেন।

সেই এজাহারে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুঠিয়ার ওসির অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ কারণে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ড না করে নিগার সুলতানাকে তা সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করেন। তখন এজাহারটি গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা থেকে এজাহার ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি সংগ্রহ করে দেখেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের নাম-ঠিকানা লেখার কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লেখা আছে।

আবার তার উল্লেখ করা আটজন আসামির পরিবর্তে সেখানে ছয়জনের নাম আছে। অথচ তিনি পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ আটজনকে আসামি করেছিলেন। নিগার সুলতানা এই বিতর্কিত এজাহারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৬ ঘণ্টা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
এসএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।