ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সুনামগঞ্জে আদালতের রায়ে স্বামীর ঘরে ফিরলেন ৫৪ নারী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
সুনামগঞ্জে আদালতের রায়ে স্বামীর ঘরে ফিরলেন ৫৪ নারী প্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫৪টি মামলায় আপস রায়ের মাধ্যমে স্বামীর ঘরে ফিরলেন স্ত্রীরা। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ রায় দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন।

যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা থেকে ৫৪ জন স্বামী এই রায়ের মাধ্যমে অব্যাহতি এবং একইসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সংসার করার সুযোগ পেলেন।

দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে যুগান্তকারী রায় দেন বিচারক জাকির হোসেন। মামলার হয়রানি, সংসার এবং দম্পতিদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

প্রথমে তাদের স্বামীদের ভাল হওয়ার জন্য সুযোগ দেন আদালত। পরে দুই পক্ষের মধ্যে আপস মীমাংসার মাধ্যমে মিলিয়ে দেন তাদের। এতে দুই পক্ষই লাভবান হবেন এবং অনেক মামলাজট কমবে মনে করেন সুনামগঞ্জ আদালতের আইনজীবীরা।

আদালাত সূত্রে জানা যায়, আদালত মনে করেন যে এই সব মামলার কারণে পরিবারগুলো ধংস হয়ে যাবে। তাদের একটি পরিবার ছিল সন্তানাদিও রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ নানান কারণে পারিবারিক সহিংসতা শুরু হয়। যার ফলে বিচারপ্রার্থী হয়ে তাদের স্ত্রীরা আদালতের দারস্থ হয়েছেন। বর্তমানে তারা অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে। তাই আদালত স্বামীদের ভাল হওয়ার শর্তে স্ত্রী সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আদালতের নিজ উদ্যোগে রায় ঘোষণা হওয়ার পর দম্পতিদের ফুল এবং শিশুদের চকলেট দিয়ে অভ্যর্থনা দেওয়া হয়।

মূলত শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং পরিবারের বন্ধন অটুট রাখতে এই পদক্ষেপ নেন আদালত। এছাড়া ১১টি মামলায় আপস নিষ্পত্তি না হওয়ায় ১১ জন স্বামীকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে এক জন ছাড়া সবাই পলাতক রয়েছেন।  

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নূরুল ইসলাম, মো. শামীম, নজরুল ইসলাম, শাহেদ চৌধুরী, রকিবুল ইসলাম, ইমরান আহমদ, আল-আমিন, মো. সোহেল মিয়া, আল-আমিন, মইন উদ্দিন, রিপন মিয়া।

মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মইনপুর গ্রামের রোখসানা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের মধ্যে পারিবারিক ঝামেলা সৃষ্টি হয়। পরে আমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করি। আজ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদালত রায় দেন। আমাদের চার সন্তান রয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করেছি মামলার জন্য সব সময় আদালতে এসে হাজিরা দিতে হত। এখন মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার কারণে আমি স্বামীর সঙ্গে ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তি বসবাস করতে পারব। এ রায়ে আমি খুশি।  

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি নান্টু রায় বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এর আগেও একইভাবে ৪৭টি মামলার রায় দেন আদালত। এ রকম রায়ে আদালতে মামলা জট কমবে এবং মানুষ আদালতে ঘন ঘন হাজিরা দেওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এভাবে দ্রুত মামলার রায় বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের জন্য ভাল দিক।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন বলেন, আগেও এই রকম রায় দেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলোকে বাঁচাতে এ ধরনের রায় দেওয়া হয়েছে। পরিবারে ঝামেলা থাকবে অভাব থাকবে সব কিছু মানিয়ে চলতে হবে। যদি আবার কোনো ঝামেলা হয় আপনারা লিগ্যাল এইডে অভিযোগ দেবেন, সেখানে আপনারা মামলা ছাড়াই বিচারকের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারবেন। যদি কোনো জটিল ঝামেলা হয় তাহলে আপনারা আবার আদালতের কাছে আসবেন আদালতের দরজা আপনাদের জন্য সব সময় খোলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।