ঢাকা: সারা দেশের থানাগুলোতে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে পুলিশের দেওয়া এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
এছাড়া আরেকটি প্রতিবেদনে ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার বিচারের সময়সীমা নিয়ে বিধান পালনে উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে একটি মনিটরিং টিম গঠনের কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এসব প্রতিবেদন দেওয়ার পর বুধবার (৩ মার্চ) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাই কোর্ট বেঞ্চ শুনানির জন্য ২৩ মে দিন রেখেছেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান ও অ্যাডভোকেট শাহিনুজ্জামান শাহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর ধর্ষণের ঘটনায় অর্থের বিনিময়ে বা অন্য কারণে সালিশে মীমাংসা করার উদ্যোগ প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাই কোর্ট।
একইসঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে সারা দেশে থানা/আদালত/ ট্রাইব্যুনালে কতগুলো মামলা হয়েছে তার তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া ধর্ষণ মামলার বিচারের সমসয়সীমা পালনে ইতোপূর্বে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ ও রায় বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ আদেশ অনুসারে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশের থানাগুলোতে বিগত ৫ বছরে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩৩১টি, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৬৮৩টি, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৬৯৫টি, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৭৬৬টি ও ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৬ হাজার ২২০টি মামলা দায়ের করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের প্রতিবেদেনে বলা হয়, হাই কোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল (৪৪১৭/২০১৬) মামলার রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩১(ক) ধারা বিধান অনুসারে দাখিল করা প্রতিবেদনগুলো সমন্বয় করে আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনার আলোকে মনিটরিং সেল গঠন করা হলো।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে সভাপতি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়) এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার প্রতিনিধিকে (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার নিচে নয়) সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি করা হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০ (৩) ধারায় বলা হয়, বিচারের জন্য মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকাজ শেষ করবে।
৩১ক (১) ধরায় বলা হয়েছে, কোনো মামলা ধারা ২০ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হইবার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালকে উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নিকট দাখিল করিতে হইবে, যাহার একটি অনুলিপি সরকারের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে।
(২) অনুরূপ ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকেও উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করিতে হইবে, যাহার একটি অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ করিতে হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন পেশকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২১
ইএস/এএ