ঢাকা: চুরির সন্দেহে সাংবাদিকদের আটকে রাখার ঘটনায় হওয়া মানহানি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন অভিনেত্রী শমী কায়সার।
মামলায় পিবিআইয়ের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) অব্যাহতির এ আদেশ দেন।
রোববার (৭ মার্চ) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
গত ৩০ জানুয়ারি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর পরিদর্শক লুতফুর রহমান চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
ঘটনাটি অনুষ্ঠানের আয়োজক কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তারক্ষীদের অনাকাঙ্ক্ষিত বাড়াবাড়ির কারণে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ই-কমার্স ভিত্তিক পর্যটন বিষয়ক সাইট ‘বিন্দু ৩৬৫’ এর উদ্বোধনকালে অনুমান বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষ করে কেক কাটার সময় হঠাৎ করে জানান যে, তার স্মার্টফোন দু’টি পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে মিলনায়তনে হৈ চৈ পড়ে যায়। মিলনায়তনের মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেন আয়োজকরা। ওই সময় আয়োজকরা সবার দেহ তল্লাশি করার কথা বললে উপস্থিত সবাই সম্মতি জানান। ওই সময় কেউ কেউ বের হতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা বের হতে নিষেধ করেন। তখন দর্শক সারি থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন ‘আমরা চোর নাকি, তাহলে কেন বের হতে দেবেন না?’ এ কথা নিয়ে মিলনায়তনে তুমুল হৈ চৈ হয়। সবার মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
এতে আরও বলা হয়, শমী কায়সার তার দু’টি স্মার্টফোন হারিয়ে মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েন। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি কিছুটা বিব্রত বোধ করেন। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে থাকা ভিডিও ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা একজন লাইটিংকর্মী ফোন দু’টি চুরি করে নিয়ে গেছেন। এরপর শমী কায়সার মঞ্চে গিয়ে তল্লাশির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তার ফোন দু’টি এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানকালে শমী কায়সার বাদীকে বা উপস্থিত কোনো সাংবাদিককে বা উপস্থিত অন্য কোনো ব্যক্তিদের উদ্দেশে ‘চোর’ বলে মন্তব্য করা, আটক করে রাখা, আটক করে তল্লাশি করার বিষয়, আটক করে তল্লাশি করার নির্দেশ দিয়েছেন, এমন বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। বাদী নিজেও এরূপ কোনো প্রকার সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এ সংক্রান্তে কোনোরূপ স্থিরচিত্র বা ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপন করতে পারেননি।
বাদীর অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনাটি অনুষ্ঠানের আয়োজক কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তারক্ষীদের অনাকাঙ্খিত বাড়াবাড়ির কারণে ভুল বুঝাবুঝির ঘটনা হিসেবে অনুসন্ধানকালে প্রকাশ পায়। অনুসন্ধানকালে গৃহীত সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় বাদীর আনিত মানহানির অভিযোগ বিবাদীর বিরুদ্ধে পেনাল কোড এর ৫০০ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর এ মামলায় শমী কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ‘সত্যতা পায়নি’ মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেন শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব রহমান। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী নুজহাতুল হাসান।
সেই নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে একই বছর ২৫ নভেম্বর একই আদালত অভিযোগটির অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান থেকে শমী কায়সারের দু’টি স্মার্টফোন চুরি হয়ে যায়। ওই অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক ও ক্যামেরা পারসন এবং শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। হারানো মোবাইল সাংবাদিকরা চুরি করেছেন বলে গেট আটকে রাখেন এবং সবাইকে তল্লাশির কথা বলেন। পরে টেলিভিশন ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাইরের একজনের কাছ থেকে মোবাইল দু’টি পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে একই বছর ৩০ এপ্রিল স্টুডেন্ট জার্নাল বিডির সম্পাদক নুজহাতুল হাসান দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় এ মানহানি মামলাটি দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২১
কেআই/এফএম