ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
একইসঙ্গে ডা. হিসেবে এ পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান রোববার (৭ মার্চ) স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএমডিসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জন বরাবরে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোতে ‘উত্তমের পড়ালেখা থেকে চাকরি, সর্বত্র জালিয়াতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ আইনি নোটিশ দেওয়া হয়।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৪-৮৫ সালে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে গড়ে এক হাজার ২০০ নম্বর (৬০ শতাংশ) বাধ্যতামূলক। কিন্তু তখন এক হাজার ১১১ নম্বর পেয়ে একজন এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তাও আবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে। পরে চাকরির ক্ষেত্রেও জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
তিনি হলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া। আওয়ামীপন্থী চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) যুগ্ম মহাসচিব তিনি। মধ্যে দুই মাস বাদ দিলে চাকরিজীবনের শুরু থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত উত্তম বড়ুয়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে হাসপাতালটির পরিচালক পদ থেকে তাকে গত ৩ নভেম্বর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমবিবিএস কোর্সে উত্তম বড়ুয়ার ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি অবৈধ ছিল। কারণ ১৯৮৪-৮৫ সালে এমবিবিএসে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা তার ছিল না। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে মাইগ্রেশন (বদলি) জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি এমবিবিএস কোর্সের ছাত্র হন।
চট্টগ্রামের রাউজানের আবুরখিলে উত্তমের বাড়ি। তার পরীক্ষা পাসের নথি যাচাই করে দেখা যায়, তিনি আবুরখিল অমিতাভ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) প্রথম বিভাগে পাস করেন। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬২৮। এরপর ১৯৮৩ সালে কুয়াইশ বুড়িশ্চর শেখ মোহাম্মদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) মানোন্নয়ন পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৪৮৩। এ সংক্রান্ত কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রদত্ত এসএসসি ও এইচএসসির নম্বরপত্র প্রথম আলোর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
১৯৮৪-৮৫ সালের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যোগ্যতা হিসেবে দুই পরীক্ষায় গড়ে ৬০ শতাংশ নম্বর বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ১৯৮৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি প্রথম আলোর কাছে রয়েছে। সেবার যোগ্যতা না থাকায় উত্তম বড়ুয়া ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
উত্তম বড়ুয়ার ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করেছে বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের পরিদর্শক জাহেদ হোসেন কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘উত্তম বড়ুয়ার বিষয়টি আমার মনে পড়ছে না। ’
পিবিআইয়ের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘উত্তম কুমার বড়ুয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। অনেকগুলো অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। ’
বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআইয়ের পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)
২০১৮-১৯ সালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনাকাটাসহ উত্তমের নানা অনিয়মের ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানেও এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২১
ইএস/আরবি