ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আইনজীবীদের টানা আন্দোলনে স্থবির চুয়াডাঙ্গার আদালত পাড়া  

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২১
আইনজীবীদের টানা আন্দোলনে স্থবির চুয়াডাঙ্গার আদালত পাড়া


 

চুয়াডাঙ্গা: আইনজীবীদের টানা আন্দোলনে ভেঙে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার বিচার ব্যবস্থা। অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গোটা আদালত পাড়ায়।

আইনজীবী ও জজশিপ কর্মকর্তাদের মুখোমুখি অবস্থানের প্রভাব পড়েছে সাধারণ বিচার প্রত্যাশীদের ওপরও।  

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিচার ও মামলা কার্যক্রম। এ অবস্থায় আরো কঠোর হুমকির হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন আইনজীবী সমিতির নেতারা। তবে জজশিপ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, তারা কোনো আন্দোলনে নেই বরং নিয়মিত অফিস করছেন। সরকারি সব দাপ্তরিক কাজও সারছেন নিয়মিতভাবেই।

গত ১৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। তাদের অভিযোগ, নতুন নাজির নিয়োগের বিষয়ে সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে তার অফিসে যাওয়া হয়। এসময় বিচারকের সঙ্গে তাদের মতানৈক্য সৃষ্টি হলে জজশিপের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনজীবী নেতাদের ওপর লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালান। হামলায় নেতৃত্ব দেন নাজির মাসুদুজ্জামান ও সেরেস্তা সহকারী জহুরুল ইসলাম। এতে চার-পাঁচজন আইনজীবী আহত হন বলেও অভিযোগ তাদের।

এ হামলার প্রতিবাদে সেদিনই জরুরি সভার ডাক দেন আইনজীবী সমিতির নেতারা। সভায় বিচারক বজলুর রহমান, নাজির মাসুদুজ্জামান ও সেরেস্তা সহকারী জহুরুল ইসলামকে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তাদের চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়। দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আদালত বর্জনের ঘোষণাও দেন তারা। সে ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ১৪ দিনের মতো লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে আইনজীবীরা।
 
সেদিনই (১৮ মার্চ) জেলা আদালতের জজশিপ কর্মকর্তারাও গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ওসমান গনি দাবি করেন, গত ১৫ মার্চ বিকেল ৫টায় অবসরজনিত ছুটিতে যান বিচারক রেজা মো. আলমগীর হাসান। অথচ রাতে স্বাক্ষর করা এক আদেশ নিয়ে জেলা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী নুরুল হক নতুন ওই আদালতের নাজির দাবি করেন। তবে এর সত্যতা না মেলায় যোগদান করার সুযোগ না পেয়ে ১৮ মার্চ সকাল ১১টার দিকে আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমানের কাছে নালিশ দিতে যান নুরুল হক। এসময় আইনজীবীরা নুরুল হকের যোগদানের ব্যাপারে বিচারকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারক বজলুর রহমান আদেশটি মানতে না চাইলে আইনজীবীরা তার টেবিল ভাঙচুর করেন তারা।

এদিকে, গত ১৮ মার্চ থেকেই আইনজীবী ও জজশিপ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিচারিক কার্যক্রম। আইনজীবীরা প্রতিদিন আন্দোলনে অংশ নিতে আদালতে এলেও তারা কোনো শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন না। এতে প্রতিদিন হাজারো বিচার প্রার্থী আদালত বারান্দা থেকে ঘুরে যাচ্ছেন। কারও আটকে আছে জামিন আবেদন, কারও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন স্থগিত হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিচার প্রার্থীদের বিচার প্রত্যাশা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আদালত পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শতাধিক বিচার প্রার্থী আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরি করছেন। ধর্ণা দিচ্ছেন উকিলের কাছেও। তবুও মিলছে না সমাধান। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গা শহরের বিচার প্রার্থী সম্রাট খান জানান, একটি মামলার জন্য গত ১০ দিন ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা না হওয়ায় মামলাটির কোনো অগ্রগতি মিলছে না।

সাতগাড়ি এলাকার আরেক বিচার প্রত্যাশী রায়হান হোসেন বলেন, আমার ছেলে কারাগারে বন্দি আছে। দিন ধার্য করা হলেও কোর্ট না চলায় তার জামিন আবেদন করতে পারছি না।  

বুধবারও আইনজীবীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আইনজীবীরা। নিয়মিত কর্মসূচি ছাড়াও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালিম হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয়, প্রতিটি সেক্টরকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার। আমাদের আন্দোলনও একই দাবির সামিল। আদালতের গুটি কয়েক কর্মচারী যে ঘুষ-দুর্নীতিতে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন। তাই ওইসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের অপসারণ চাই আমরা।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন বলেন, টানা ১৪ দিন ধরে নিয়মিত আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছি। অনেকটা সফলও হয়েছি আমরা। যদি আমাদের সব দাবি পূরণ না হয়, এর থেকেও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেব। সেখানে চুয়াডাঙ্গা জেলাকেও অচল করা হবে।

এদিকে জজশিপ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তারা গণমাধ্যমে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান। তবে আদালতের বর্তমান পরিস্থিতি লিপিবদ্ধ করে আইন সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া তারা কোনো আন্দোলনে নেই, তাই নিয়মিতভাবে দাপ্তরিক কাজ করছেন তারা।

অপরদিকে, টানা দুই সপ্তাহ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহাবুল ইসলাম সেলিম জানান, এমনিতেই চুয়াডাঙ্গা আদালতে রয়েছে মামলার জট। এর মধ্যে টানা দু’সপ্তাহ আদালত বন্ধ থাকায় মামলাজট আরও ঘনিভূত হবে। তাই এ অবস্থা স্বাভাবিক করতে দ্রুতই সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।