ঢাকা: করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে এক সপ্তাহের লকডাউনের প্রথম ঘোষণা আসার পর থেকেই আদালত পাড়ায় ছিল উদ্বেগ। আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীরা রোববার (৫ এপ্রিল) সারাদিন জানার চেষ্টা করেছেন লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম কীভাবে চলবে।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, আদালত পাড়ায় বিচারপ্রার্থী কিছু মানুষ ভিড় করেন। এদিন ঢাকায় শুধু চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দু’জন বিচারক জরুরি বিচারকাজ পরিচালনা করেন। সোমবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম ও আশেক ইমামের আদালতে বিকেল তিনটা থেকে ঘণ্টা দুয়েক চলে বিচার কাজ। এ সময় শুধু পুলিশের হাতে গ্রেফতার আসামিদের ২৪ ঘণ্টার বাধ্যবাধকতার কারণে আদালতে হাজির করা আসামিদের রিমান্ড ও জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি করেন তারা।
তবে মাত্র দু’জন বিচারক এজলাসে বসায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা এ দুটি আদালতে ভিড় করেন। আসামিদেরও এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় গাদাগাদি করে রাখা হয়। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতিতে তাই এ দুটি আদালতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এদিন টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার আদালতে আসেন জাবেদ আলী নামে এক কৃষক। মেয়েকে একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারের জন্য জামিনের আশায় এসেছিলেন তিনি। তবে এদিন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় এখন তিনি বাকরুদ্ধ। কারণ সাতদিন পরই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল তার। এখন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের জন্য জামিন চাইতে পারবেন না জেনে কেঁদে ফেলেন এজলাস কক্ষের সামনেই।
এমন অনেক বিচারপ্রার্থীই সোমবার এসেছিলেন ঢাকার আদালতে। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে তারা আছেন উদ্বেগের মধ্যে। বিশেষ করে যাদের আসামি হাজতে রয়েছেন তাদের মধ্যে উদ্বেগটা বেশি। কারণ থানার প্রডাকশন না থাকলে কারও পক্ষে জামিন চাওয়ার সুযোগ নেই। বিভিন্ন আইনজীবী জামিন আবেদনের শুনানির ক্ষেত্রে এবিষয়টিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।
ঢাকার মহানগর ও জেলার দায়রা আদালত এবং সব প্রকার দেওয়ানি আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অন্য সব কাজ লকডাউনে বন্ধ ছিল। তাই এদিন বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। হঠাৎ লকডাউনে বিচারপ্রার্থীদের পাশাপাশি আইনজীবীরাও অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঈদের আগে শেষ পর্যন্ত আদালত খুলবে কিনা এ নিয়ে তাদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ আছে।
সোমবার আদালতে আসা আইনজীবী মো. পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের আগে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে কিনা জানি না। এখন ঢাকায় থাকতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়ে। প্রডাকশনের দু’জন আসামির পক্ষে আজ মামলা করেছি। সপ্তাহের বাকি দিনে কি হবে জানি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে রীতিমতো বিপদেই পড়তে হবে।
আরেক আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের কার্যক্রম একবারে বন্ধ না করে সীমিত করে দেওয়া যেতো। এ সিদ্ধান্ত আইনজীবীদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতিও এমন দাবি সম্বলিত একটি দরখাস্ত প্রধান বিচারপতিকে দিয়েছিলেন। যেখানে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার হাজিরা, হাজতি আসামিদের হাজির না করা, সবধরনের স্থগিতাদেশ ও নিষেধাজ্ঞা ও জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া, এজলাসে প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেওয়া এবং আদালতের সামনে স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার সামগ্রী রাখাসহ ১০ দফা দাবি জানানো হয়। তবে আইনজীবী সমিতির দাবির এ প্রতিফলন অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে ঘটেনি। বরং সবধরনের আদালত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তই আসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে।
জানতে চাইলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) আমাদের নতুন কমিটির বাজেট মিটিং আছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেখান থেকে আমরা হয়তো সীমিত পরিসরে বা ভার্চ্যয়ালি আদালত পরিচালনার দাবি জানাবো। কমিটির সদস্য ও সমিতির সাবেক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনজীবীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২১
কেআই/আরআইএস