ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার (২০ জুন) থেকে নিম্ন আদালতে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগের দিন রাতে জারি করা সার্কুলারে খুব একটা প্রভাব পড়েনি আদালত পাড়ায়।
আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শারীরিক উপস্থিতিতে কার্যক্রম শুরু হলেও আদালত পুরোপুরি সচল হয়ে উঠতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
রোববার (২০ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, ভার্চ্যুয়াল জামিন শুনানিগুলো সরাসরি এজলাসে হওয়ায় কিছুটা ভিড় বেড়েছে। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোর সামনে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে নিয়মিত আদালত খুলে দেওয়ায় বেশিরভাগ আইনজীবীই খুশি। বিশেষ করে তুলনামূলক জুনিয়র আইনজীবীরা আদালত খুলে দেয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
আইনজীবী এম. কাউসার আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আদালতে একটা হ-য-ব-র-ল ভাব ছিল। হাজতি আসামির জামিন শুনানি হতো ভার্চ্যুয়ালি, ফাইলিং ও প্রডাকশনসহ বেশকিছু শুনানি হতো সরাসরি। তাই একজন আইনজীবীকে আদালতে আসতেই হতো। এজন্যই আমরা চাচ্ছিলাম স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালত খুলে দিতে। শেষ পর্যন্ত আদালত খুলে দেওয়ায় আমরা খুশি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য হোসনী মোবারক বলেন, আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে কয়েকবার প্রধান বিচারপতি বরাবর আদালত খোলার দাবি জানিয়েছিলাম। কিছুটা বিলম্বে হলেও সেই দাবি পূরণ হয়েছে। এখন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের কাজ করবেন বলে আশা করছি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম মাসুম বলেন, বেশিরভাগ আইনজীবীই এই অবস্থায় আদালত বন্ধের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেননি। বিশেষ করে গত রোজা ও ঈদের আগে আইনজীবীরা অনেক সংকটের মধ্যে সময় কাটিয়েছেন। যে কারণে শেষ পর্যন্ত সাধারণ আইনজীবী হিসেবে আমাদের মাঠে নামতে হয়েছিল। যারা মাঠে থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণকে বেগবান করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিছুটা বিলম্ব হলেও আইনজীবীদের দাবি মেনে নিয়ে নিয়মিত আদালত খুলে দেওয়ায় প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাই।
আদালত সূত্রে জানা যায়, খোলার প্রথম দিনে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। শুধু ভার্চ্যুয়াল আদালতের পরিবর্তে জামিন শুনানিগুলো এজলাসে হয়েছে। আইনজীবীরা যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিচারকাজে অংশ নিয়েছেন। তবে স্থগিত থাকা মামলার শুনানি শুরু হলে আদালত পুরোপুরি কর্মমুখর হয়ে উঠবে। প্রথম দিনেই অনেক আদালতে স্থগিত থাকা মামলা শুরুর জন্য তারিখ দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে সবগুলো মামলা সচল হতে হয়তো সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে মূলত ভার্চ্যুয়ালের পরিবর্তে জামিন শুনানিগুলো সরাসরি এজলাসে হয়েছে। তবে সাক্ষ্যগ্রহণসহ অন্যান্য বিচারিক কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। স্থগিত থাকা মামলাগুলোর নতুন তারিখ নির্ধারণ হবে এবং এরপর শুনানি হবে। বিচারকাজ পুরোপুরি সচল হয়ে উঠতে হয়তো সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে।
এদিকে শনিবার জারি করা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধস্তন সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে আগামী ২০ জুন থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
‘স্থানীয় প্রশাসন কোনো জেলা সদর, মহানগরে করোনা ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক, কার্যাবলি চলাচলে বিধি-নিষেধ জারি করলে সংশ্লিষ্ট জেলার, মহানগরের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনাল সমূহে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে জামিন ও জরুরি দরখাস্ত শুনানি করা যাবে। ’
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় যে ক্ষেত্রে আদালতে পক্ষগণের উপস্থিতির আবশ্যকতা নেই সেক্ষেত্রে পক্ষগণের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতে হাজিরা দাখিল করবেন। জামিন শুনানি এবং আমলি আদালতে ধার্য তারিখে হাজিরার জন্য কারাগারে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যান বা অন্য কোনোভাবে আদালত প্রাঙ্গণে বা এজলাস কক্ষে হাজির করার আবশ্যকতা নেই। ’
এতে আরও বলা হয়, ‘আদালতের বিচারিক কর্মঘণ্টার প্রথম ভাগে (সকাল ৯৩০ ঘটিকা হতে সুপুর ১১৫ ঘটিকা) সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক, আপিল রিভিশন, রিভিউ শুনানি এবং দ্বিতীয় ভাগে (দুপুর ২০০ ঘটিকা হতে বিকাল ৪৩০ ঘটিকা) জামিন সংক্রান্ত বিবিধ মামলা, জামিনের দরখাস্ত ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্তসহ অন্যান্য দরখাস্ত শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আদালত প্রাঙ্গণ এবং এজলাস কক্ষে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত গত বছরের ৩০ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত নিদের্শনা প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২১
কেআই/এমজেএফ